মুহাদ্দিস ডক্টর এনামুল হক |
হিজরি সালের শাবান চান্দ্রমাসের সমাপ্তির পরই প্রতি বছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসে ইবাদতের মাস রমাদানুল মুবারক। এ গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যময় মাসের আগমন সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুসলমানদের জীবনে সারা বছরের মধ্যে রমাদান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং এ মাস কুরআন নাজিলের মাস এবং কুরআনের বিজয়ের মাস ও কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের শপথ নেবার মাস বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি। তাই বলা হয়, রমাদান মাস হচ্ছে আনলিমিটেড ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন হিফজ, জিকির, শোকর তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। যে মাসে নেক আমলের সাওয়াব হয় বহুগুণে বর্ধিত, মুমিনের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে উন্নীত, পুণ্য জোয়ারে অন্তরাত্মা বিধৌত, জান্নাতের দুয়ার অবারিত। যে মাসে রহমতের দরিয়ায় ভেসে যায় রাশি রাশি পাপ, বরকত নেমে আসে এ ধরায়, মুছে যায় জীবনের অভিশাপ। জাহান্নামের দরজা হয় বন্ধ, শৃঙ্খলিত শয়তান, ভাইয়ে-ভাইয়ে কেটে যায় নিত্যদিনের ভেদাভেদ। এই মাস তাহাজ্জুদ, তারাবিহ, জিকির, তাসবিহ, তিলাওয়াত, দান-খয়রাত, তাওবাহ ও রহমতের মাস। সে মাসের পূর্বের মাসে প্রাকপ্রস্তুতি গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মুমিন জীবনে রমাদান একটি অনিবার্য ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এ সুবর্ণ সুযোগ মুমিন অবহেলা করতে পারে না। বরং সে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রভুর নৈকট্য লাভে সৎকর্মের ময়দানে যুদ্ধরত সৈনিকের মতো, বজ্রকঠোর প্রতিজ্ঞা আর অপরাজেয় প্রতিযোগিতার চেতনায়। যেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর প্রতিযোগিতাকারীদের উচিত এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা।” (সূরা মুতাফফিফিন : ২৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘‘এ ধরনের সাফল্যের জন্যই আমল করতে হবে তাদের যারা আমল করতে বদ্ধপরিকর।” (সূরা সাফফাত : ৬১)
রাসূল সা. বলেন: আনাস ইবন মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন, “তোমরা সর্বদা ভালো কাজ কর। আর আল্লাহর অপার রহমত ভরা বিশেষ বিশেষ সময়গুলোকে কাজে লাগাও। আল্লাহ তাঁর এসব রহমত দিয়ে বান্দাদের মধ্যে যাকে খুশি ধন্য করেন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ কর, তিনি যেন তোমাদের অবাঞ্ছিত জিনিসগুলোকে ঢেকে রাখেন এবং তোমাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেন।” (আল মু’জামুল কবীর লিত ত্বাবারানী-৭২০; শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাকি-১১২১)
রমাদানের জন্য প্রাকপ্রস্তুতি গ্রহণ ও তাকে মনেপ্রাণে স্বাগত জানানো রাসূলের সুন্নাত। রাসূল সা. রমাদানকে স্বাগত জানাবার জন্য প্রায় পুরো শাবান মাসজুড়েই সিয়াম পালন করতেন। সাহাবা-তাবিয়ীদের রমাদান পূর্বপ্রস্তুতিও ছিল এ সুন্নাতেরই ধারাবাহিকতা। রমাদানকে স্বাগত জানাতে আমাদের প্রস্তুতি কেমন এবং কিভাবে গ্রহণ করবো, তা নিন্মে আলোচনা করার প্রয়াস পাবো।
এক. রমাদান পাওয়ার জন্য দোয়া করা : আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেন, ‘‘আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও সূচনালগ্ন হতেই আল্লাহর বিধান মতে মাসের নিশ্চিত সংখ্যা বারোটি। তার মাঝে চারটি সম্মানিত। এ অমোঘ ও শাশ্বত বিধান; সুতরাং এর মাঝে তোমরা (অত্যাচার-পাপাচারে লিপ্ত হয়ে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না। তোমরা সম্মিলিতভাবে মুশরিকদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হও, যেভাবে তারা সম্মিলিতভাবে তোমাদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন।’’ (সূরা তাওবা : ৩৬)। চার হারাম মাস হচ্ছে-মুহাররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। আবু বকর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যমানা কাল-চক্রাকারে ঘুরে আসমান-জমিন সৃষ্টির প্রথম দিনের অবস্থায় ফিরে এসেছে। বারো মাসে বছর, তার ভেতর চারটি সম্মানিত। তিনটি একসাথে-জিলকদ, জিলহজ, মুহররম। অপরটি-মুদার সম্প্রদায়ের পঞ্জিকা মতে-জুমাদা ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। (বুখারি-৩০২৫, ৪১৪৪, ৭০০৯; মুসলিম-৪৪৭৭)
প্রত্যেক মুমিনের উচিত প্রাণ খুলে এ মাসের বারাকাহ আহরণের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা। রাসূল সা. ও সাহাবীরা রা. দোয়া করতেন। এ মর্মে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন। নবী সা. রজব মাসের পদার্পণে এ দোয়া করতেন, ‘‘আনাস ইবন মালেক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রজব মাস শুরু হলে রাসূল সা. এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবাও ওয়া শাবান ওয়া বাললিগনা ইলা শাহরি রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমাদান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’’ (মুসনাদে আহমাদ-২৩৪৬, আল মু’জামুল আওসাত-৩৯৩৯)
মুআল্লা বিন আল-ফাদল বলেন: ‘‘সাহাবাগণ ছয় মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন রমাদান মাস পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে পৌঁছিয়ে দেন। আর ছয় মাস দোয়া করতেন যেন, তাদের ইবাদাত আল্লাহ কবুল করেন।”
ইয়াহইয়া ইবন আবি কাসির বলেন: “তারা এভাবে দোয়া করতেন: “হে আল্লাহ! আমাকে রমাদান পর্যন্ত নিরাপদে রাখ। রমাদানকে আমার জন্য নিরাপদে রাখ। আমার রমাদানকে তুমি কবুল কর।”
দুই. মি’রাজ সমৃদ্ধ রজবের তোহফা : মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সা. এ ঐতিহাসিক ও বিস্ময়কর সফরে মহান আল্লাহ কর্তৃক যেসব তোহফা প্রাপ্ত হলেন, তা হলো: ১) প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়। মুসা (আ) এর পরামর্শে সর্বশেষ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তোহফা হিসেবে দেয়া হয় এবং এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে মহান আল্লাহ তায়ালা পঞ্চাশ ওয়াক্তের সাওয়াব দিবেন। ২) সূরা আল বাকারার শেষ তিন আয়াত ৩) উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে যারা শিরক থেকে বেঁচে থাকবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।
তিন. মি’রাজোত্তর ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের হিদায়াতি নির্দেশনা: তাফসিরে জালালাইনে কামালাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সূরা আল ইসরায় আল্লাহর বাণী “ওয়া কদা রব্বুকা আল্লাহ তা’বুদু …” হতে পরবর্তী আয়াতসমূহে আল্লাহ তায়ালা ২৫টি বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কিছু বিধি-বিধান মৌলিক এবং কিছু বিধি-বিধান শাখা প্রশাখামূলক। শুরু হয়েছে আল্লাহর তাওহিদ বর্ণনা দিয়ে এবং এগুলোই দ্বীনের মৌলিক ও মূলভিত্তিসম নীতিমালা নির্দেশনা বর্ণনা করা হয়েছে। (তাফসিরে জালালাইন হাশিয়ায়ে কামালাইন, ১ম খণ্ড, পৃ: ২৩২)
আল্লামা নঈম সিদ্দিকী প্রণীত ‘মুহসিনে ইনসানিয়্যাত’ এর বাংলা সংস্করণ ‘মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সা.’ গ্রন্থে আছে, সূরা আল ইসরা মূলত মিরাজের প্রেরণায় সিক্ত। এ সূরায় নিম্নোক্ত বিষয়ে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়:
১. বনি ইসরাইলের শিক্ষাপ্রদ ইতিবৃত্ত সামনে রেখে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর আইন বড় বড় শক্তিধর ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে পর্যন্ত জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করায় এবং তারা বিপথগামী হলে তাদেরকে অন্য কোনো অনুগত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দিয়ে পিটিয়ে দেয়া হয়। অপরদিকে এ কথাও শেখানো হয়েছে যে, বিজয় ও সফলতার যুগে পৌঁছে তারাও যেন বনি ইসরাইলের মতো আচরণ শুরু করে না দেয়।
২. চরম প্রতিকূল পরিবেশে দ্ব্যর্থহীনকণ্ঠে বলা হয়, সত্য সমাগত বাতিল পরাভূত (সূরা ইসরা : ৮৭) অর্থাৎ অন্ধকার তখন দূরীভূত হবে এবং প্রভাতের আবির্ভাব ঘটবে।
৩. আল্লাহ তায়ালা তাকে এ কথাও জানিয়ে দেন যে, মক্কাবাসী এবার আপনাকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিবে। কিন্তু আপনাকে বহিষ্কার করার পর বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারবে না। (সূরা ইসরা : ৭৬) হিজরতের যে দোয়া আল্লাহ তায়ালা শেখালেন তার ভাষা ছিল এ রকম “হে আমার রব! আমাকে সত্যের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান এবং সত্যের দরজা দিয়েই (বর্তমান পরিবেশে) বের করুন আর আমাকে আপনার পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে শাসন ক্ষমতা দান করুন।” (সূরা ইসরা : ৮০) এ দোয়ায় শাসন ক্ষমতার প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে সুসংবাদ দেয়া হলো যে, হিজরতের পরবর্তী সময়টা আধিপত্য ও শাসনের যুগ হবে।
উক্ত গ্রন্থে আরো উল্লেখ আছে, মিরাজের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে অবস্থানের সৌভাগ্য মুহূর্তে যে বিশেষ ওহি নাজিল করা হলো সেটাই সূরা ইসরার আকারে আমাদের কাছে বিদ্যমান। সূরার শুরুতে হয়েছে মি’রাজ বা ইসরার ঘটনা দিয়ে আর গোটা সূরাই মি’রাজের প্রেরণায় সিক্ত। সূরা ইসরায় ২৩-৩৯ পর্যন্ত আয়াত একাধারে মুসলিম সমাজব্যবস্থায় প্রাথমিক মূলনীতি সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে করে ঐ মূলনীতি সমূহের ভিত্তিতে নতুন সমাজ ও নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা হয়। (মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সা., নঈম সিদ্দিকী, ঢাকা: শতাব্দী প্রকাশনী, প্রথম সংস্করণ, ১৯৯৮ খ্রি:, পৃষ্ঠা: ১৭৬-১৭৭)
তাফহীমূল কুরআনে মাওলানা মওদূদী (রহ) উল্লেখ করেন, এ পর্যায়ে এখানে নৈতিকতা ও সভ্যতা সংস্কৃতির এমন সব বড় বড় মূলনীতি পেশ করা হয়েছে যার ওপর ভিত্তি করে ইসলাম মানুষের সমগ্র জীবনব্যবস্থার ইমারত গড়ে তুলতে চায়। এটাই নবী সা.-এর আন্দোলনের মূল ও প্রধান লক্ষ্য। এটিকে ইসলামী আন্দোলনের ঘোষণাপত্র বলা হয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কিছু পূর্বে মাক্কী যুগের শেষে এবং আসন্ন মাদানি যুগের প্রারম্ভলগ্নে এ ঘোষণাপত্র আরববাসীদের সামনে পেশ করা হয়।
তাফসিরে জালালাইনের কামালাইনে এ ২৫টি বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কিছু বিধিবিধান মৌলিক এবং কিছু বিধিবিধান শাখা-প্রশাখামূলক। সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ) ১৪টি মূলনীতি, সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ তাফসির ফি যিলালিল কুরআনে বর্ণনা করেছেন, এখানে একে একে জারি করা হয়েছে ১৪টি মূলনীতি ও বিধিসমূহ যা মুসলমানদের গোটা জীবনের ভিত্তি, (ফি যিলালিল কুরআন, সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ, ১২ খণ্ড, পৃ: ২১৬) ইসলামী বিশ্বকোষের বলা হয়েছে, ১২টি মূলনীতির নির্দেশনা এ পর্বে বর্ণিত হয়েছে। (ইসলামী বিশ্বকোষ, ১৯ খণ্ড, ১৪৮ পৃ:), বুস্তানুল আরিফিন গ্রন্থে বলা হয়েছে, সূরার এ পর্যায়ের আয়াতসমূহে ১৫টি মূলনীতি ঘোষিত হয়েছে যা ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। মূলনীতি সমূহ হচ্ছে;
এক. তোমার রবের ফায়সালা এই যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব আনুগত্য ও উপাসনা করবে না।
দুই. পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে ‘উহ’ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিও না বরং তাদের সাথে মর্যাদার সাথে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিন¤্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে, ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন। তোমাদের রব খুব ভালোভাবেই জানেন তোমাদের মনে কী আছে। যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল, যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগির নীতি অবলম্বন করার দিকে ফিরে আসে।
তিন. তোমার আত্মীয়-স্বজনদেরকে তাদের অধিকার-প্রাপ্য দিয়ে দাও। সমাজে যারা গরিব মিসকিন নিঃস্ব তাদেরও দাও, এমনকি যারা বিদেশে মুসাফির হালতে কষ্টে পতিত হয় তাদেরকেও তাদের অধিকার দিয়ে দাও।
চার. বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।
পাঁচ. যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকিন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এ জন্য যে, এখনো তুমি আল্লাহর প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও।
ছয়. নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তা একেবারে খুলে ছেড়ে দিয়ো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে। তোমার রব যার জন্য চান রিযিকের পথ প্রশস্ত করে দেন আবার যার জন্য চান সঙ্কীর্ণ করে দেন। তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন।
সাত. গরিব হয়ে যাওয়ার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণের রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা গুরুতর মহা অপরাধ।
আট. তোমরা যিনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ এবং ধ্বংসের কদর্য পথ।
নয়. আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না। যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয় আমি তার উত্তরাধিকারীকে কিসাস দাবি করার অধিকার দান করেছি। অতএব সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন না করে। নিশ্চয়ই সে সাহায্যপ্রাপ্ত।
দশ. ইয়াতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাক্সক্ষা ছাড়া, ইয়াতিমের যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত।
এগারো. ওয়াদা অঙ্গীকার পূরণ করবে। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমাদের জবাবদিহি করা হবে।
বারো. মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দিবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম এবং এর পরিণামও ভালো।
তেরো. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার উপর অমূলক ধারণার বশবর্তী হয়ে হঠাৎ কোনো কাজ করবে না। নিশ্চয়ই শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও চিন্তাশক্তির ব্যবহারের ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসবাদ করা হবে।
চৌদ্দ. জমিনের উপর দিয়ে কখনও গর্বভরে চলাফেরা করো না। তোমরা পদভারে জমিন চিরে ফেলতে পারবে না এবং পাহাড়ের সমান উঁচুও হতে পারবে না। (সূরা ইসরা : ২৩-৩৭)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমাদানের মতো একটি সুমহান মাস দান করেছেন। সে জন্য আমাদের উচিত তাঁর প্রতি হৃদয়ের সবটুকু শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, ভক্তি-অনুরাগ নিঃসারিত করে কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। শুকরিয়া দ্বারা নিয়ামত স্থায়ী ও বর্ধিত হয়। কুরআনে বলা হয়েছে, “যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আযাব বড় কঠিন।’ (সূরা ইবরাহিম : ৭)
এ জন্য একজন মনীষী বলেছেন, “শুকরিয়ার শিকল দিয়ে নিয়ামতকে বন্দী করে রাখ।” তাছাড়া, কত মানুষ আছে রমাদানের প্রতীক্ষায় থাকে, কিন্তু তার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা ইন্তিকাল করে। গত বছর এই মাসে এমন অনেক লোক ছিল, যারা আজ আমাদের মাঝে নেই। চিরবিদায় নিয়ে পরকালে চলে গেছে। পৃথিবীতে প্রতি অর্ধসেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যায়। ঘণ্টায় প্রায় ৩৬০০ লোক ইন্তিকাল করেন। প্রতি মিনিটে গর্ভজনিত জটিলতায় ইন্তিকাল করেন একজন নারী। এভাবে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে হায়াত দারাজ করেছেন। আমরা রমাদান পালন করার সুযোগ পেতে যাচ্ছি। সে জন্য মহান মনিবের সমীপে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা পেশ করা উচিত। রমাদান বরণের এটি একটি অন্যতম উপাদান। আরো মনে রাখতে হবে কৃতজ্ঞতা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তার মধ্যে পাঁচটি জিনিস পাওয়া যায়: ক. নিয়ামতের স্বীকৃতি; খ. নিয়ামতদাতার প্রশংসা; গ. নিয়ামতদাতার প্রতি ভালোবাসা; ঘ. নিয়ামতদাতার প্রতি আনুগত্য; ঙ. নিয়ামতদাতার নিয়ামতকে তার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যবহার করা।
রমাদানের আগমন মুমিনের জন্য আসমানি সুসংবাদ। তাই এ মাসের আগমনে আনন্দানুভূতি ও গভীর সন্তোষের বহিঃপ্রকাশ থাকা উচিত আমাদের আচার-আচরণে, কথায়-কর্মে। পরস্পরের মধ্যে এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন প্রদান করা উচিত। আল্লাহর অফুরান নিয়ামত পেয়ে প্রত্যেক মুমিন আনন্দিত হয়ে থাকে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, “বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়’। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।” (সূরা ইউনুস : ৫৮)
রাসূল সা. বলেন, “আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের (আত্মপর্যালোচনা/নিষ্ঠা/সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে) সাথে সিয়াম রাখে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” (বুখারি-৩৮, ১৮০২, ১৯১০; মুসলিম-১৮১৭)
রাসূল সা. অন্যত্র ইরশাদ করেন, “রমাদানের প্রতিটি দিন-রাতে আল্লাহ অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাদের প্রত্যেকের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।” (মুসনাদে আহমাদ-৭৪৫০)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, (রোযাদার বান্দা) আমার জন্যই খাদ্য-পানীয় ও প্রবৃত্তি বর্জন করেছে। সিয়াম আমারই জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। আর নেক আমল দশগুণে বর্ধিত হবে।” (বুখারি-১৭৯৫; নাসাঈ-২২১৫, ২২১৯)
শাবান রমাদানের প্রস্তুতির মাস। এ মাসের একটি অন্যতম পবিত্র রজনী হচ্ছে ১৫তম রজনী। এ রাত সম্পর্ক হাদিসে রয়েছে, “এ রাতে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর মুশরিক ও মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ-১৩৯০)
রমাদানের শুরুতে যেসব অপরাধ থেকে বিশেষভাবে তাওবাহ করা ওয়াজিব, সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে হারাম মালের কথা। হারাম ও অবৈধ উপার্জন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবনে আল্লাহর গজব ও বিপর্যয় ডেকে আনে। যে কারণে তার কোনো দোয়া কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে সহিহ হাদিসে এসেছে, “আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলদের। তিনি বলেছেন, “হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি সম্যক জ্ঞাত।” (সূরা মুমিনুন : ৫১)। তিনি আরো বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসাবে দান করেছি।” (সূরা বাকারাহ : ১৭২)। অতঃপর রাসূলে কারীম সা. এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! অথচ, সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে।” (মুসলিম-২৩৯৩; মুসনাদে আহমদ-৮৩৪৮)
অতএব, হে আল্লাহর বান্দা নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখ, ঘরের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখ, পকেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেখ, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখ, কোথাও এমন কোন মাল আছে কিনা যা তোমার জন্য হালাল নয়, হারাম। হারাম পাওয়া গেলে সেগুলো বের করে দাও। নিজেকে ও নিজের সম্পদকে পবিত্র কর। হারাম থেকে পবিত্র হও, যেন তোমাকে এসে মহান অতিথি সততার উপর প্রতিষ্ঠিত পায়, তাহলে তুমি হবে রবের একান্ত প্রিয়পাত্র।
দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, খুন-গুম, হত্যা-ধর্ষণ, জাতীয় অর্থ লোপাট, শেয়ারবাজার হরিলুট, ধোঁকা-প্রতারণা, মজুদদারি, কৃত্রিমভাবে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, মিথ্যা ভাউচার, গায়েবি মামলা-গ্রেফতার, রিমান্ড, ভর্তি ও চাকরি বাণিজ্য, বেতন ছাড়া কর্মচারী খাটিয়ে ইত্যাদি উপায়ে অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়ে যারা কালো টাকা সাদা করার কথা ভাবছে, তাদের জন্য রমাদানপূর্ব এই সময় তাওবাহ করার সর্বোত্তম সুযোগ। প্রাপকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে সততা ও হালাল উপার্জনের পথে ফিরে আসার এখনই সময়।
রমাদানকে সাদরে বরণ করে নেয়ার অন্যতম একটি করণীয় হলো, সিয়াম শুরু হওয়ার আগেই এর যাবতীয় বিধি-বিধান তথা মৌলিক মাসআলা-মাসাইল সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা। সিয়ামের ফরজ-সুন্নাহ, রুকন-শর্ত, আদব, কী কী কাজ করলে রোযা বিনষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি এ পর্যায়ের অন্তর্গত। এভাবে সিয়াম সাধনা হবে বিশুদ্ধ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। মুসলমান তার দ্বীন সম্পর্কে থাকবে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী, দায়িত্ব সম্পর্ক থাকবে সচেতন ও স্বচ্ছ ধারণাসমৃদ্ধ, এমনটিই ইসলামের নির্দেশনা। বিশেষ করে ফরজ দায়িত্ব। কারণ মূর্খতা ও অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে এ দায়িত্ব থেকে বাঁচার কোন সুযোগ নেই। এজন্য ইরশাদ হয়েছে: “তোমরা যদি না জানো, তাহলে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর।” (সূরা নাহল : ৪৩)। মূলত যারা ধর্মীয় জ্ঞানে গভীরতা অর্জন করে, তারাই প্রকৃত ভাগ্যবান, তারাই শ্রেষ্ঠ। রাসূল সা. বলেন,
“আল্লাহ যার কল্যাণ সাধন করতে চান, তাকে দীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” (বুখারি-৭১, ৬৮৮২; মুসলিম-২৪৩৬)
বর্তমান যুগে নির্ভরযোগ্য আলিম, গবেষক ও আলোচকদের সিডি, ক্যাসেট থেকেও এসব বিষয়ে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে যাদের নাম সর্বাগ্রে উল্লেযোগ্য তাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তিনি তাঁর ভাষণ-বক্তৃতার মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য ইসলামী জ্ঞানের এক মহাভাণ্ডার ও বিশ্বকোষ উপহার দিয়েছেন, যার আবেদন যুগ যুগ ধরে শেষ হবে না। আল্লাহ তা’আলা তাকে হেফাজাত করুন। এসব সিডি-ক্যাসেট পরস্পর আদান-প্রদান করেও আমরা ইসলামী দাওয়াতের মহান দায়িত্ব পালন করতে পারি।
রমাদান কুরআন নাজিলের মাস। কুরআনের কারণেই রমাদানের মহাসম্মান। তাই রমাদানের মাহাত্ম্য অর্জনে কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সেজন্য চাই কুরআন চর্চা ও তিলাওয়াতের সাথে এ মাস আসার পূর্বেই গভীর সখ্য ও ভালোবাসার বন্ধন রচনা করা। ইবন রজব আল হাম্বলী বলেন, “শাবান যেহেতু রমাদানের ভূমিকাস্বরূপ, তাই রমাদানে যা কিছু শরিয়তসিদ্ধ, শাবানেও তা-ই শরিয়তসিদ্ধ। যেমন, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত। যাতে রমাদানকে গ্রহণ করে নেয়ার প্রস্তুতি অর্জিত হয়। আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি নাফস বশীভূত হয়। আনাস রা. বলেন, শাবান মাসের আগমন হলেই মুসলমানরা কুরআন নিয়ে ব্যাপৃত হয়ে পড়তো। কুরআন তিলাওয়াত ও চর্চা করত। মালের যাকাত বের করত। দুর্বল ও মিসকিনরা যেন রমাদানের সিয়াম পালন করার সামর্থ্য লাভ করতে পারে।”
সালামাহ বিন কুহাইল বলেন, “শাবানকে বলা হতো, কারিদের (কুরআন তিলাওয়াত ও চর্চাকারীদের) মাস।” আল হাসান বিন সাহল বলেন, শাবান বলেছিল, “হে আল্লাহ! আমাকে তুমি দুটো মহান মাসের মধ্যে রেখেছ। আমার জন্য কি আছে? আল্লাহ বললেন, তোমার মধ্যে রেখেছি কুরআন পঠন।”
রমাদান আসার আগেই প্রত্যেক মুমিনের উচিত আত্মসমালোচনা করা। বিগত রমাদানে আমার কর্মপন্থার মধ্যে কী কী ঘাটতি ছিল? কেন আমি কাক্সিক্ষত মাত্রায় ইবাদাত করতে পারিনি? কী কারণে আমি সিয়াম থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় লাভবান হতে পারিনি? কী করলে ভালো হতো? সিয়াম আরো অর্থবহ ও শিক্ষণীয় কেমনে হতো? এসব বিষয়ে আত্মসমালোচনা করে যথাযথ পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা রমাদানপূর্ব প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের রমাদান প্রস্তুতি
সাধারণত রমাদানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে। এ সুযোগে কুরআন সহিহ তিলাওয়াত ও চর্চা করা যায়। কুরআন তিলাওয়াত না জানলে অথবা তিলাওয়াত অশুদ্ধ থাকলে এ সুযোগে শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার দৃঢ় সঙ্কল্প করা যায়। অন্তত সালাত আদায়ের জন্য জরুরি আয়াত, সূরা এবং সালাতের মাসায়ালা-মাসাইল ভালোভাবে শেখা। যারা সহিহ-শুদ্ধরূপে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন তারা সাধ্যমতো তিলাওয়াত করার পাশাপাশি তাফসির অধ্যয়নের প্রিপারেশন নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সরাসরি হলে ভালো হয়, নতুবা অনলাইনে কোর্স করার প্রস্তুতি নেয়া যায়। তবে অযথা ফেসবুক, ইউটিউব ও অনৈসলামিক টিভি প্রোগ্রাম ইত্যাদিতে সময় নষ্ট না করার দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ করতে হবে।
অতীতের সব অপরাধের গ্লানি, পাপাচারের কালিমা ও ব্যর্থতার পিছুটান থেকে মুক্ত হয়ে এক নতুন জীবনধারা গড়তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সকলের সাথে সম্পর্কের নতুন পাতা খুলতে হবে। নতুন পাতা আল্লাহর সাথে, তাঁর আনুগত্যের শপথ নিয়ে, নাফরমানি বর্জনের ঘোষণা দিয়ে। নতুন পেজ রাসূলের সাথে। তাঁর আদর্শ ধারণের মাধ্যমে। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে। প্রত্যেকের হক যথার্থভাবে আদায় করে। সকল মুসলমানের সাথে। ন্যায়ানুগ আচরণ ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে। তাই রমাদানকে সামনে রেখে প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে অধিক পরিমাণে ইবাদাতের মাধ্যমে রমাদানকে বরণ, বেশি বেশি নফল, কিয়ামুল লাইল, দান-খয়রাত করার অব্যাহত প্রচেষ্টা, হারাম বর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা ইত্যাদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। বৈষয়িক মহামারীর প্রেক্ষিতে আল্লাহর বিধান জানা, মানা ও কায়েম করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাঁরই রহমত ও বারাকাহ লাভে আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক; বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদরাসা, বিরামপুর, দিনাজপুর