সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা |
‘ইসলাম’ একটি পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান। এতে কোন উগ্রবাদ ও চরমপন্থার স্থান নেই। ইসলামের চিরন্তন আদর্শ সব সময়ই সৃজনশীল ও আর্ত-মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। মূলত ইসলাম কোন ধর্ম বা ভাবাবেগের নাম নয় বরং একটি ইনসাফপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। তাই যা মানুষের মৌলিক অধিকার ও সৌজন্যবোধের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ তা কখনোই ইসলাম অনুমোদন করে না এবং এসবের বিরুদ্ধে বিরামহীন সংগ্রাম করায় ইসলামের আদর্শ। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই ইসলামকে সন্ত্রাসবাদ আর মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসবাদী প্রমাণ করার অপচেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। আর এক্ষেত্রে বিরুদ্ধবাদীরা অনেকটা সফলতাও পেয়েছে। অথচ ইসলাম হচ্ছে শান্তি, উন্নয়ন ও প্রগতিশীল জীবন ব্যবস্থা। পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন, ‘… তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায়, এ দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন নিজ ইচ্ছায়। আর তাদেরকে সরল পথ দেখান’ (সুরা আল মায়িদাহ-১৫-১৬)।
কালামে পাকের বিভিন্ন স্থানে ‘দ্বীন’, শব্দটির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। শব্দটিকে প্রায়শই ‘ধর্ম’ হিসেবে অনুবাদ করা হলেও তা মোটেই যথার্থ নয়। পবিত্র কালামে হাকীমে ‘দ্বীন’ শব্দটি দ্বারা একজন ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিমের জন্য অবশ্য পালনীয় পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাকেই নির্দেশ করা হয়েছে। তাই ‘দ্বীন’ প্রকৃত অর্থে কোন ধর্ম বা অনুষ্ঠানিকতা নয় বরং অদ্বিতীয় জীবন বিধান। আর সে দ্বীনের মধ্যেই মানবজাতির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিহিত রয়েছে।
মূলত ‘দ্বীন’ শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কোন শব্দের একাধিক অর্থ থাকলে সব অর্থ সকল স্থানেই সমানভাবে প্রযোজ্য হয় না। কোন স্থানে কী অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা পূর্ণ বাক্য থেকেই বুঝা যায়। যে বাক্যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ঐ শব্দের অর্থ সঠিকভাবে বুঝবার উপায় নেই (ইক্বামাতে দ্বীন-অধ্যাপক গোলাম আযম )।
প্রভূত সংখ্যক হাদিসে ‘দ্বীন’ তথা ইসলামকে ‘মধ্যমপন্থী জীবনব্যবস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই ইসলামী জীবনাদর্শে উগ্রপন্থা বা চরমপন্থা কোন ভাবেই স্বীকৃতি নয় বরং এসবের বিরুদ্ধে ইসলাম জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেছে। হযরত আবু হুরায়রা বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন’ খুব সহজ। যে ব্যক্তি তার দ্বীনে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেয়। আর সে তা অব্যাহত রাখতে পারে না। তাই তোমাদের চরমপন্থী হওয়া উচিৎ নয়..( সহীহ আল বোখারী/ফাতহুল বারী)।
আর ইসলাম শব্দটি সিল্ম শব্দমূল হতে গঠিত। ব্যুৎপত্তিগতভাবে সাল্ম এর কয়েকটি অর্থ হল, (১) বাহ্য ও অভ্যন্তরীণ উভয়বিধ অপবিত্রতা (বিপদ-আপদ) ও দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত থাকা; (২) সন্ধি ও নিরাপত্তা ; (৩) শান্তি ও (৪) আনুগত্য ও হুকুম পালন (ইসলাম-ইউকিপিডিয়া)।
সালাম ও সাল্ম উভয় শব্দেরই অর্থ হল আনুগত্য, আতœসমর্পণ ও হুকুম পালন। অর্থগুলোর মধ্যে ‘পবিত্র ও দোষ- ত্রুটিমুক্ত হওয়া’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই শব্দমূল হতে (ক্রিয়াপদে/ফে’ল) আসলামা, ইসলাম গ্রহণ করল ও ক্রিয়াবিশেষ্য ইসলাম, আতœসমর্পণ এবং কর্তৃকারকে য়ুস্লিমু, ইসলাম গ্রহণকারী শব্দ তিনটির উৎপত্তি হয়েছে। কুরআনে ৮ স্থানে ইসলাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে । হরকত তথা স্বরচিহ্নের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন আকারে তবে একই অর্থে এই শব্দমূল থেকে উৎপন্ন বেশ কয়েকটি পদের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । যুদ্ধবিরতির জন্য শান্তির প্রস্তাব, ইসলামি বিধান, যুদ্ধ পরিহারের প্রস্তাব, শান্তি বা শান্তি কামনামূলক মুসলিম অভিবাদন। শেষোক্ত অর্থে আয়াতে, ইসলাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাসবাদের দূরতম সম্পর্ক থাকার কোন সুযোগ নেই।
ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হলেও সাম্প্রতিক ক্ষয়িষ্ণু বিশ্বব্যবস্থায় ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদকে একাকার করার অপচেষ্টা চলছে। বৈশ্বিক ইসলাম বিদ্বষী শক্তিগুলো ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে নৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে মুসলমানদের নামে সাথে যুক্ত করেছে সন্ত্রাসবাদী তকমা। আসলে সন্ত্রাসবাদ কোন জাতি-রাষ্ট্রের একক সমস্যা নয় বরং বৈশ্বিক সমস্যা। যদিও সাধারণভাবে সন্ত্রাসবাদের কোন বেঁধে দেয়া সংজ্ঞা বা সীমারেখা নেই। তবে প্রচলিত সংজ্ঞানুযায়ি সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে যে সকল কাজ জনমনে ভীতির সঞ্চার করে এবং ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও কোন আদর্শিক লক্ষ্য হাসিলের জন্য কৃত এমন কাজ যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও জননিরাপত্তায় বিঘœ সৃষ্টি করে। আইন বহির্ভূত ও সৌজন্যহীন উগ্রবাদী কার্যকলাপ এবং যুদ্ধকেও সন্ত্রাসবাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। মূলত প্রথাবিরুদ্ধ উগ্রতা সন্ত্রাসবাদের প্রতিভূ। যা ইসলামী আদর্শের সাথে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আর সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে সভ্যতা, সৃজনশীলতা ও মানবতার প্রধান প্রতিপক্ষ। ইসলাম এ ধরনের প্রবণতাকে কোন ভাবেই সমর্থন করে না বরং এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো, ‘ফিতনা তথা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সুরা আল বাকারাহ- ১৯১)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘শুনে রাখো, সেসব জালিমদের ওপর আল্লাহর লানত, যারা আল্লাহর পথ হতে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং এ পথকে জটিল ও বক্র করে তুলতে চেষ্টা করে, আর এসব লোকই হয় আখিরাতকে অস্বীকারকারী (সুরা আল হুদ-১৮-১৯)।’
ইসলাম সন্ত্রাসবাদ বা উগ্রবাদকে তো সমর্থন করেই না বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। মহান আল্লাহ্ তায়ালার ঘোষণা, ‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনার চূড়ান্তভাবে অবসান হয় এবং দ্বীন শুধুমাত্র আল্লাহ্’র জন্যই নির্দিষ্ট হয় (সুরা আল বাকারাহ-১৯৩)।’ ‘আল্লাহ তায়ালা বিপর্যয় ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডকে আদৌ পছন্দ করেন না (সুরা আল বাকারাহ-২০৫)।’
‘সন্ত্রাসবাদ’ কথাটার বহুল প্রচলন শুরু হয়েছে পশ্চিমী বিশ^ থেকেই। আর এটিই হচ্ছে তাদের বৈশি^ক প্রতিপক্ষ মুসলিম শক্তিকে মোকাবেলার মোক্ষম হাতিয়ার। সঙ্গত কারণেই বিশে^র যেকোন স্থানে সংঘঠিত সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রবাদী ঘটনার সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের সংযুক্তকরণ পশ্চিমী বিশে^র রীতিমত ফ্যাসনে পরিণত হয়েছে। আসলে অহেতুক ইসলামভীতিই বিশ^ পরাশক্তি ও পশ্চিমা বিশ^ এ বিষয়ে একেবারে প্রান্তিকতায় নিয়ে গেছে। আর সে জন্যই মার্কিন চিন্তাবিদ হান্টিংটনও ইসলামী ও পশ্চিমা সভ্যতার মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক প্রধান জেমস ওলসি এ দুই সভ্যতার দ্বন্দ্বকেই ‘চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর বিশ্ব রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কথাবার্তা যতটা জোরদার হয়েছে অতীতে আর কখনও এমনটি দেখা যায়নি; বরং এর আগে সন্ত্রাসী অনেক দল ও গোষ্ঠী বৃহৎ শক্তিগুলোর আর্থিক, সামরিক ও নৈতিক সমর্থনও পেয়েছে। ২০০১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ১৩৭৩ নম্বর প্রস্তাব অনুমোদন করা সম্ভব হয়। ২০০৩ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২৮টি দল বা সংগঠনকে সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা দেয়। এসব দল বা সংগঠনের মধ্যে ১৮টি দল বা সংগঠনই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক। অথচ অতীতে এসব কখনো লক্ষ্য করা যায়নি।
হোয়াইট হাউজ শুরু থেকেই কথিত ইসলামী র্যাডিক্যালিজ্মকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসাবে প্রচার করে এবং তা মোকাবিলা করাকেই সার্বিক সমাধান বলে সিদ্ধান্ত নেয়। হোয়াইট হাউজের দৃষ্টিতে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেভাবে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসীবাদ এবং শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিজম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, তেমনিভাবে কথিত ইসলামী ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এ দেশটির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাদের ভাষায় কথিত ইসলামী ফ্যাসিবাদ ও ইসলামী সন্ত্রাসবাদের হোতা বা মদদাতা হচ্ছে প্রথম সারিতে আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও লেবানন এবং দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে সুদান, লিবিয়া ও ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ। তাই বল প্রয়োগ করে এসব দেশের সরকার পরিবর্তন করা মার্কিন সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বা প্রাধান্য পেয়েছে। যার বাস্তব প্রতিফলনও বিশ^বাসী লক্ষ্য করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলে এই অশুভ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদী তকমা দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা যাচ্ছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। আর বিশ^ পরাশক্তিগুলো তাদের পালেই হাওয়া দিচ্ছে। অথচ ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদ বা কোন ফিতনার দুরতম সম্পর্ক অতীতে প্রমাণ করা যায়নি আর ভবিষ্যতে যাবে না-ইনশা আল্লাহ।
উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের দায়ি করার অশুভ প্রবণতা দীর্ঘ দিনের হলেও তা আর অতীতের মত হালে পানি পাচ্ছে না বরং সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে এর ভিন্নচিত্রই বিশ^বাসীর সামনে উঠে এসেছে। যা আত্মসচেতন বিশ^বাসীর অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিতে সহায়ক হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাসেলস-ভিত্তিক ‘পলিটিক্যাল ক্রিয়েটিভ ফাউন্ডেশন’-এর একটি রিপোর্ট সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-আরাবিয়া প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টের ভাষ্যমতে, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের শিকার ৯১.২ ভাগ নিরাপরাধ মুসলিম। সারাবিশ্বে যত সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটছে তার ৯০ ভাগেরও বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মুসলিমরা। অতিসম্প্রতি প্রকাশিত ফরাসি রিপোর্টে দাবি করা হয়, এ সব হামলাগুলোর মধ্যে ৮৯.১ ভাগ সন্ত্রাসবাদের ঘটনা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতেই ঘটানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে মুসলিমরা। অথচ উল্টো দোষ চাপানো হয়েছে মুসলমানদের ওপর।
‘পলিটিক্যাল ক্রিয়েটিভ ফাউন্ডেশন’এর এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হামলা করার পর থেকে আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী যত সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে তাতে শুধু মুসলমানরাই ৯১.২ শতাংশ হামলার শিকার হয়েছে। রিপোর্টের ভাষ্য মতে, গত ৪০ বছরে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা বিশ্বব্যাপী ৩৩ হাজার ৭শ ৬৯টি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আর এ হামলাগুলো নিহত হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬ জন। আর ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৩১ জন মানুষ আহত হয়েছে। আর এজন্য সংশ্লিষ্টদের সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি, উগ্রবর্ণবাদ ও ধর্মান্ধতাকে সরাসরি দায়ি করা হয়েছে। কিন্তু এসব সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলমানদের সম্পৃক্ত করা যায়নি বরং গবেষণায় ভিন্নচিত্রই ওঠে এসেছে।
মূলত সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির ক্ষেত্রে নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ অনুরাগ-আনুগত্য এবং যেকোন মূল্যে হীনস্বার্থ হাসিলের বিষয়টি সক্রীয় থাকে। আর সাম্প্রদায়িক ভাবনার সৃষ্টি হয় উগ্রবাদী ও সঙ্কীর্ণ ধর্মচিন্তা থেকে। ক্ষেত্র বিশেষে আঞ্চলিকতা ও গাত্রবর্ণও বিবেচনায় আনা হয়। অবশ্য মহল বিশেষে সাম্প্রদায়িকতাকে ধর্মাশ্রিত ও ধর্মের বিষবৃক্ষ মনে করা হলেও এর সাথে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধের কোন সম্পর্ক নেই বরং সাম্প্রদায়িকতার পাত্র-মিত্ররা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের জন্যই এসবের জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। অথচ সন্ত্রাসবাদের আঁতুর ঘর অন্যকোন স্থানে। আসলে সন্ত্রাসবাদের মূলে না গিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর দোষ চাপানোর অশুভ প্রবণতার কারণেই তা এখন জাতিরাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা বৈশি^ক সন্ত্রাসবাদে রূপ নিয়েছে। যা এখন প্রায়ই অপ্রতিরোধ্যই বলা চলে।
অথচ সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ইসলামের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। ইসলাম মানুষকে জাতি ও বর্ণ দিয়ে বিচার করে না। বরং তার বিশ্বাস ও কর্মের মূল্যায়ন করে। বিশ্বাস মানুষের অন্তরের বিষয়। বিশ্বাস গড়ে ওঠে জ্ঞানের আলোয়। বিশ্বাস কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই; আর ইসলাম তা অনুমোদনও করে না। তাই কারও বিশ্বাস নিয়ে বিদ্রুপ, কটূক্তি বা কটাক্ষ করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ; গালমন্দ ও বিদ্বেষ ছড়ানোকে ইসলামে হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘তারা আল্লাহ ছাড়া যে সবকে ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না; তাহলে তারা আল্লাহকে গালি দেবে শত্রুতাবশত অজ্ঞতার সঙ্গে (সুরা আল আনআম, ১০৭)।
মূলত উগ্র বা চরমপন্থী সাম্প্রদায়িকতার পরিশিলীত রূপই হচ্ছে বর্ণবাদ। আর বর্ণবাদ সেই দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা এবং ক্রিয়াকলাপ যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবেই অনেকগুলো গোষ্ঠীতে (ৎধপবং) বিভক্ত এবং একই সাথে আরও বিশ্বাস করা হয়; কোন কোন গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে উঁচু অথবা নিচু; কিংবা তার উপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা অধিকতর যোগ্য কিংবা অযোগ্য।
অবশ্য বর্ণবাদের এক এবং অভিন্ন সংজ্ঞা নির্ধারণ করাও সম্ভব হয়নি। কারণ, গবেষকদের মধ্যে গোষ্ঠী (ৎধপব) ধারণা নিয়েই মতবিরোধটা বেশ প্রবল। বর্ণবাদ কখনো গাত্রবর্ণ, কখনো আঞ্চলিকতা, কখনো গোত্র, কখনো বর্ণ (পধংঃব) দিয়ে হতে পারে। কারো কারো মতে, মানুষের আচরণ যদি কখনো তার জাতি বা বর্ণ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেটি অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর না হলেও তাকে বর্ণবাদ বলা হবে। এ বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মত হলো, শুধুমাত্র আঞ্চলিকতা, গোত্র বা বর্ণচিন্তায় প্রভাবিত হয়ে কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা; নিগ্রহ, শোষণ এবং অত্যাচার চালানোর নামই বর্ণবাদ। আর বর্ণবাদের উগ্র বহিঃপ্রকাশই সন্ত্রাসবাদ।
ইসলামে ভৌগোলিক, আঞ্চলিক, নৃতাত্ত্বিক, জাতিগত ও ধর্মীয় প্রভেদে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সমর্থন করা হয় না। এই শ^াশত জীবন বিধানে কোনো প্রকার শ্রেণিবৈষম্য নেই, নেই কোনো অস্পৃশ্যতা। ঈমান আনা, না আনার বিষয়টি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও ইচ্ছার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার দ্বীর্থহীন ঘোষণা, ‘দ্বীন সম্পর্কে জোরজবরদস্তি নেই; সত্য ভ্রান্তি থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে, আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়। (সুরা আল বাকারাহ-২৫৬)
বস্তুত ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ একে অপরের পরিপূরক। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক উপযোগিতা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন না করেই স্বল্প ও অস্বচ্ছ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গোঁড়ামী বা চরমপন্থা অবলম্বন করায় হচ্ছে ধর্মান্ধতা। অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বিশেষ উদ্দেশ্যে ধর্মানূরাগী মুসলমানদেরকেই এখন ধর্মান্ধ তকমা লাগানো হচ্ছে এবং এই প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবেই বেড়েছে। আর এজন্য ইসলাম ও মুসলমানদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ ও আল্লাহভীরু মানুষদের নামে সন্ত্রাসবাদী, ধর্মান্ধ ও উগ্রবাদী আখ্যা দেয়া হচ্ছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই। কিন্তু যারা প্রকৃত অর্থে ধর্মান্ধ, সন্ত্রাসাবাদী ও উগ্রবাদী তারা থাকেন একেবারেই আলোচনা-সমালোচনার বাইরে। এমনকি ‘ধর্মান্ধতা’ শব্দের অপব্যবহারও বেড়েছে বৈশি^ক রাজনীতিতে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এই শব্দের অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী ও ধর্মান্ধ বলে গালি দেয়া হচ্ছে। শুধু ইসলাম নয় বরং ‘ধর্মান্ধ’ কথাটি কোন ধর্মেরই ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অথচ বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই এই শব্দের অপব্যবহার করা হচ্ছে।
বস্তুত, ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ, চরমপন্থা, বর্ণবাদ ও ধর্মান্ধতার কোন স্থান নেই। ইসলাম কারো ওপর বলপূর্বক কিছু চাপিয়ে দেয়াকে মোটেই সমর্থন করে না বরং কর্মফলের বিষয়টি আল্লাহ তায়ালার ওপর ছেড়ে দেয়াকেই সঙ্গত ও ইনসাফপূর্ণ মনে করে। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা মু’মিন আর যারা ইহুদি, খ্রিস্টান ও ছাবিইন; তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে তবে তাদের জন্য তাদের রবের নিকট বিনিময় রয়েছে’ (সুরা আল বাকারাহ-২৬২)। ‘অবশ্যই আপনি বিশ্বাসী মুমিনদের ভালোবাসা ও সম্প্রীতিতে নিকটতম পাবেন তাদের, যারা বলে আমরা নাসারা (সাহায্যকারী) খ্রিষ্টান (সুরা আল মায়িদাহ-৮২)।’
ইসলাম যেকোন ধরনের হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বিরোধী। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘কোনো মানুষকে হত্যা করার কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ছাড়া (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করলো; (আবার এমনিভাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করলো তবে সে যেন গোটা মানব জাতিকেই বাঁচিয়ে দিলো (সুরা আল মায়িদাহ-৩২)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিনে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে, তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার’(সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বিদায় হজ্বের ভাষণে মুসলিম উম্মাহ্কে সতর্ক করে বলেছিলেন- ‘শুনে রাখো! মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই। সাবধান, আমার পরে তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)।’
ইসলাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে প্রেরিত অদ্বিতীয় ও ইনসাফপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। যা সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে মানব জাতির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন-জীবন বিধান’ (সুরা আল ইমরান-১৯)।
আল্লাহ তায়ালা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কল্যাণের মূর্ত প্রতীক হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। রাসূল (সা.) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তা সভ্যতার ইতিহাসে নজীরবিহীন। তাকে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করে পবিত্র কালামে হাকীমে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি (সুরা আল আম্বিয়া-১০৭)।’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সুরা আল কলম-আয়াত-৪)। কালামে পাকে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সুরা আল আহজাব-২১)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকেই ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর’ (সুরা আল হাশর-৭ )। বস্তুত মহানবী (সা.) তার অনুপম চরিত্র মাধুর্য্য শক্তিতেই তিনি সফলতার চরম শিখরে আরোহন করেছিলেন।
মহানবী (স.) যে বিশে^র সর্বযুগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও তার প্রচারিত দ্বীন যে সর্বজনীন ছিল তার অমুসলিম মনীষীরাও অকাতরে শিকার করে নিয়েছেন। ‘ঞযব ঐঁহফৎবফ’ গ্রন্থে মাইকেল এইচ হার্ট রাসূল (সা.) সর্বযুগের ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ গু পযড়রপব ড়ভ গঁযধসসধফ ঃড় ষবধফ ঃযব ষরংঃ ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ’ং সড়ংঃ রহভষঁবহঃরধষ ঢ়বৎংড়হং সধু ংঁৎঢ়ৎরংব ংড়সব ৎবধফবৎং ধহফ সধু নব য়ঁবংঃরড়হবফ নু ড়ঃযবৎং , নঁঃ যব ধিং ঃযব ড়হষু সধহ রহ যরংঃড়ৎু যিড় ধিং ংঁঢ়ৎবসবষু ংঁপপবংংভঁষ ড়হ নড়ঃয ৎবষরমরড়ঁং ধহফ ংবপঁষধৎ ষবাবষং.’(ঞযব ঐঁহফৎবফ নু গ ঐবধৎঃ.)
বিখ্যাত ইংরেজ পন্ডিত জর্জ বার্নার্ড শ ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে বলেছেন, ‘চমৎকার প্রাণবন্ততার কারণে মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সবসময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সাথে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি মুহাম্মদকে নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। তিনি অতি চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিষ্টানবিরোধী হওয়া সত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। (ঝরৎ এবড়ৎমব ইবৎহধৎফ ঝযধি রহ দ ঞযব এবহঁরহব ওংষধস’, ঠড়ষ. ১, ঘড়. ৮, ১৯৩৬.
পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট ইসলাম বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড লুইসও মনে করেন ইসলাম খুব স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। এমনকি ইসলাম আত্মহত্যারও বিরোধিতা করে। ইসলামের যুদ্ধনীতি মোতাবেক সব অবস্থাতেই শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বেসামরিক মানুষকে যুদ্ধের সময় নিরাপত্তা দিতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে রাসায়নিক ও পরমাণু বোমার মতো গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারও নিষিদ্ধ’।
আল্লাহ তা’য়ালা যুগে যুগে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন গোত্রের নিকট নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি অপরাপর নবী-রাসূলদের বিভিন্ন গোত্রের জন্য বা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রেরণ করলেও রাসূল (স.) কে শেষ নবী হিসাবে বিশ্ব মানবতার জন্য প্রেরণ করেছেন। আর সে মিশনে তিনি পুরোপুরি সফলও হয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- ‘আমরা আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্যই সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী বানিয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না’ (সুরা সাবাহ-২৮)।’ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,‘তিনি আল্লাহ যিনি তার রাসূলকে হিদায়ত ও সত্য জীবন ব্যবস্থা সহ পঠিয়েছেন, যেন তিনি এ দ্বীনকে সমস্ত বাতিল ব্যবস্থা সমূহের উপর বিজয়ী করেন। আর সত্য প্রতিষ্ঠাতা রূপে আল্লাহর যথেষ্ট’ (সুরা আল ফাতাহ)। তাই ইসলামে উগ্রবাদ, বর্ণবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মান্ধতার কোন স্থান নেই। আল্লাহ প্রদত্ত এই শ^াশত জীবন এসব সকল প্রকার সঙ্কীর্ণতা ও কদর্যতার উর্ধ্বে।
বস্তুত ভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুণœ করে, স্বার্থহানি ঘটিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা-অপপ্রয়াসই সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর বর্ণবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতা উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িকতার পরিশীলিত রূপ মাত্র। আর অন্যের স্বার্থে কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে, ভিন্নমত ও ভিন্নধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই নিজ সম্প্রদায়ের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা কোনভাবেই কোন নীতি গর্হিত কাজ নয়। তা সাম্প্রদায়িকতা বা সন্ত্রাসবাদের পর্যায়ভুক্ত বিবেচনারও সুযোগ নেই।
সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলমানরাই এখন এর প্রধান ভিকটিম। যা সাম্প্রতিককালের ঘটনা প্রবাহের দ্বারা খুবই স্পষ্ট। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ হুমকির মুখে পড়েছে-এমন উদ্ভট ও কল্পিত বিশ্বাস থেকে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে নির্বিচার গুলীবর্ষণে হত্যা করা হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব সন্ত্রাসবাদী ও বর্ণবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় সবগুলোই হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ঘটনার আদ্যপান্ত পর্যালোচনায় এক ভয়াবহ চিত্রই বিশ্ববাসীর সামনে ওঠে এসেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২০১৫ সালের অক্টোবরে সুইডেনের ট্রোলহাটনের স্কুলে হামলায় নিহত হন ৩ জন মুসলিম। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার কুইবেক অঙ্গরাজ্যের এক মসজিদে ২৯ বছর বয়সী বিসোনেত্তে নামের ব্যক্তি তাদের ওপর গুলীবর্ষণ শুরু করে। ওই হামলায় আহত হয় আরও ১৯ জন। ২০১৭ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডে ছুরিকাঘাতে নিহত ২ জন। হত্যাকারীর বক্তব্য ছিল, ‘স্বাধীনভাবে কথা বলতে দাও নইলে মরো। তুমি একে সন্ত্রাসবাদ বলতে পারো, আমি এটাকে দেশপ্রেম বলবো’। একই বছরের জুনে যুক্তরাজ্যের ফিনসব্যুরি পার্কের বাইরে একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর চালিয়ে দেয়া ভ্যানের চাপায় নিহত হয় মুকাররম আলি ও অপর ১২ জন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, ড্যারেন অসবর্ন নামের হত্যাকারী ভ্যান হামলার পর চিৎকার করে বলেছিলো, ‘আমি সব মুসলমানকে মারতে চাই-অল্প কয়েকজনকে মারলাম’।
২০১৭ সালে পূর্ব লন্ডনের বেকটনে ব্রিটিশ মুসলিম মডেল রেশাম খান এবং তার চাচাতো ভাই জামিল মুখতারের ওপর এসিড হামলা চালানো হয়। অথচ বিশ্বব্যাপী একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, অধিকাংশ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী হামলার সাথে মুসলমানরা জড়িত। কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে তা বরাবরই অসার বলেই প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপের ফলাফলে দেখা দেছে, গত ১০ বছরে দেশটিতে শতকরা ৭১ ভাগ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা। অথচ এজন্য ঘটনার জন্য পুরোপুরি মুসলমানদেরকেই দায়ী করা হয়েছে বরাবরই।
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংস্থা অ্যান্টি-ডিফেম্যাশন লিগ কাজ করে ইহুদি-বিরোধী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্বেষমূলক ঘটনা নিয়ে। সংস্থাটির এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যতোগুলো সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো মধ্যে ৭১ শতাংশ চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ও আধিপত্যবাদীরা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এদিকে, ‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস অব অস্ট্রেলিয়া’ নামের গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ‘এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।’ সিডনি-ভিত্তিক সংস্থাটির ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে (সারাবিশ্বে) উগ্র-ডানপন্থী দল ও ব্যক্তিরা ১১৩টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। এদের অধিকাংশই মুসলমান।’
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই হামলা হয়েছে ৫৯টি। আর সে বছর মারা গেছেন ১৭ জন। ২০১৭ সালে ১২টি হামলা হয়েছে যুক্তরাজ্যে, ছয়টি সুইডেনে এবং গ্রিস ও ফ্রান্সে দুটি করে হামলা চালানো হয়েছে। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হয়েছে ৩০টি। নিহত হয়েছেন ১৬ জন। সংস্থাটির হিসাবে সেসব হামলার অধিকাংশই পরিচালিত হয়েছে ‘মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগে আক্রান্ত উগ্র-ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা।
‘গ্লোবাল টেরোরিজম ডাটাবেজ’এর তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেগুলো তিনভাগের দু’ভাগ চালিয়েছে বর্ণবাদী, মুসলমানবিরোধী, ইহুদিবিরোধী, ফ্যাসিস্ট, সরকারবিরোধী এবং জাতিবিরোধী ভাবাবেগে প্রভাবিত ব্যক্তিরা।
‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি শতাব্দীর শুরুতে উত্তর আমেরিকায় অনেক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জেহাদি দলগুলোর জড়িত থাকার খবর এসেছে। কিন্তু, গত দুই বছরে উগ্র-ডানপন্থি রাজনীতির সন্ত্রাসবাদ বিশ^ শান্তিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে আরও বলা হয়, ‘২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নয়টি সন্ত্রাসী হামলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সেসব হামলার জন্যে দায়ী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা।’ প্রতিবেদনটির ভাষ্য মতে, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের কথা বেশি শোনা গেলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১০ বছরে উগ্র ডানপন্থীরাই বেশি হামলা চালিয়েছে। কিন্তু চাপানে হয়েছে ‘উদর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে’।
মূলত ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রচারিত হয় উগ্র-ডানপন্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সেভাবে প্রচারিত হয় না। এখন সেদিকটিতে নজর দেওয়া সময় এসেছে। কেননা, সব জায়গাতেই উগ্র-ডানপন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দু’টি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উগ্র বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ সব সময়ই বিশ্ব শান্তি, প্রগতি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ইতিহাস পর্যালোচনায় সে চিত্রই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। বর্ণবাদী ও সন্ত্রাসবাদীরা প্রতিনিয়ত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করলেও পরিকল্পিতভাবে এসব উগ্রবাদী তৎপরতার জন্য দায় চাপানো হয় মুসলমানদের ওপর। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণায় এসব অভিযোগের কোন সত্যতা মেলে না।
বস্তুত, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীরা কখনোই বিশ্বশান্তির জন্য হুমকী নয় বরং সংখ্যালঘু শ্বেতসন্ত্রাসীরাই এখন বিশ্বশান্তির জন্য প্রধান অন্তরায়। অথচ এসব অপরাধীরা থাকে নেপথ্যে। এরা কোন ধর্মেরই প্রতিভূ নয় বরং সভ্যতা ও মানবতারই প্রতিপক্ষ। মূলত নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ ট্রাজেডির মাধ্যমে বিশ্বের শান্তি প্রিয় মানুষের অন্তরদৃষ্টি খুলে দিয়েছে। সম্প্রতি তার সাথে যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি ব্রাসেলস-ভিত্তিক ‘পলিটিক্যাল ক্রিয়েটিভ ফাউন্ডেশন’-এর একটি রিপোর্ট। যা শান্তিপ্রিয় বিশ^বাসীর অন্তরদৃষ্টি খুলে দিতে সহায়ক হয়েছে।
মূলত শীতল যুদ্ধের পর পুঁজিবাদের কর্তৃত্ব বিস্তারের জন্য গণতন্ত্র বা লিবারেল ডেমোক্রেসির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠানের চেষ্টা হিসাবে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া জোরদারের প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একই সাথে পশ্চিমা সভ্যতা নিজের অভ্যন্তরীণ সংহতি ধরে রাখার জন্য বিজাতীয় শত্রুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। আর এ শত্রু হিসাবেই বেছে নেয়া হয়েছে ইসলামকে। জাপানী বংশোদ্ভূত মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার নিম্নোক্ত বক্তব্য এ প্রসেঙ্গে প্রণিধানযোগ্য: ‘ইসলাম একটি রাষ্ট্রীয়, সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ জীবনাদর্শ। এর রয়েছে সুনির্দিষ্ট নৈতিক বিধান এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার সম্পর্কে স্পষ্ট বিশ^ দৃষ্টিভঙ্গী। ইসলামের আবেদন ও আকর্ষণ অত্যন্ত জোরালোভাবে বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক। কারণ, এ ধর্মের দৃষ্টিতে সকল মানুষই সমান। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম বিশ্বের এক বিশাল অংশে লিবারেল ডেমোক্রেসির ওপর বিজয়ী হয়েছে এবং লিবারেল ব্যবস্থাগুলোর জন্য ইসলাম খুবই মারাত্মক হুমকি। এমনকি যেসব মুসলিম দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় ইসলাম অনুপস্থিত, সে সব দেশেও ইসলাম এক মারাত্মক হুমকি।’ ফুকোয়ামার বক্তব্য থেকেই পশ্চিমী বিশে^র ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কারণ খুবই সুষ্পষ্ট।
মূলত কথিত ইসলামভীতি তাদের ভাষায় ইসলামী মৌলবাদভীতিই পুরো বিশ্ব পরিস্থিতিকে অস্থির ও অশান্ত করে তুলেছে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনের ঘরোয়া বিতর্কে ফান্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ শব্দের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইয়াহুদী, ইসলামী, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের কিছু ধারা জোরদার হয়ে ওঠে। এ ধারাকে পাশ্চাত্য পন্ডিত পিটরাল বার্গার ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী ধারা বলে উল্লেখ করেছেন। এ সময় থেকেই মৌলবাদ বা মৌলবাদী শব্দটির ব্যবহার বাড়তে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর থেকে এ শব্দের ব্যবহার আরও ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে হান্টিংটন ও বার্নার্ড লুইসের মতো কোন কোন চিন্তাবিদ এ তত্ত্ব তুলে ধরেন যে, ভবিষ্যতের দ্বন্দ্ব বা সংঘাত হবে ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যে। আর এই বায়বীয় ভীতি থেকেই পশ্চিমা ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে তাদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে মুসলমানদেরকে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গীবাদের সাথে সমৃক্ত করা হচ্ছে।
মূলত ইসলামী সভ্যতার জন্য দু’টি মৌলিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছিল দুই দিক থেকে। একটি হল এর অভ্যন্তরীণ অবক্ষয়। আর দ্বিতীয়টি হল মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমা আধুনিকতাবাদের সর্বাত্মক হামলা। ইসলামপন্থীরা মনে করে বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল ইসলামের ঐতিহ্য ও অতীতের দিকে ফিরে যাওয়া। পশ্চিমা চিন্তাবিদদের সমালোচনার কারণে ঘরের ভেতরই পশ্চিমা আধুনিকতাবাদের মধ্যে চিন্তাগত বিভেদ দেখা দিয়েছে এবং জন্ম নিয়েছে পোস্ট মডার্নিজম বা উত্তর-আধুনিকতাবাদ। এছাড়াও বিশ্বায়নের ফলে ইসলামকে এর সকল দিকসহ পুনরুজ্জীবিত করার উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর সে সুযোগটাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন উদীয়মান মুসলিম শক্তি। আর তা বিশ্ব পরাশক্তি ও পশ্চিমা বিশ্ব মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই বৈশ্বিক রাজনীতি মুসলমানদের পুনরুজ্জীবনকে ঠেকানোর জন্যই মুসলিম শক্তিকে সন্ত্রাববাদী আখ্যা দেয়ার ব্যর্থ কসরত করা হচ্ছে।
মূলত ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ জীবন বিধান। তাই ইসলামে উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই। ইসলাম শত্রুর সঙ্গেও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ঘোষণা, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে; কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। সুবিচার করবে, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা যা করো, নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন’ (সুরা আল মায়িদাহ-৮)।