পার্থিব সম্পদের মোহ অজ্ঞতাবশত বিভ্রান্ত করে মানুষকে

মুহাম্মদ আসাদ উল্লাহ আদিল | 

زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ ـ
বাংলা অনুবাদ :
নারী, সন্তান-সন্ততি, সোনা-রূপার স্তূপ, বাছাইকৃত ঘোড়া, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব (কেবলমাত্র) পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহ, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আলে ইমরান : ১৪)

সূরা পরিচিতি ও নামকরণ :
সূরার নাম আলে ইমরান, ক্রম-৩, নাজিলের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ক্রম-৯৭, আয়াত সংখ্যা-২০০, রুকু সংখ্যা-২০। অত্র সূরার ৩৩ নং আয়াত اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰۤی اٰدَمَ وَ نُوۡحًا وَّ اٰلَ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اٰلَ عِمۡرٰنَ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ এর اٰلَ عِمۡرٰنَ শব্দকে সূরার নাম হিসেবে চয়ন করা হয়েছে। এ সূরার অন্যান্য নাম আজ জাহারাহ (الزهرة), আত্ তাইবাহ (التائبة), আল্ কানুয (الكنوز) আল্ আমান (الامان) আল্ মুজাদাল (المجادلة), আল্ ইসতিগফার (الاستغفار), আল্ মানিয়া (المانعة) ইত্যাদি।

নাজিলের সময়কাল :
এটি একটি মাদানি সূরা। পুরো সূরাটি চার ভাষণে নাজিল হয়:

প্রথম ভাষণ : প্রথম রুকু থেকে চতুর্থ রুকুর দ্বিতীয় আয়াত পর্যন্ত বদর যুদ্ধের পরে নিকটবর্তী সময়ে নাজিল হয়।
দ্বিতীয় ভাষণ : চতুর্থ রুকুর তৃতীয় আয়াত থেকে ষষ্ঠ রুকু পর্যন্ত নবম হিজরিতে নাজরানের প্রতিনিধিদলের আগমনকালে নাজিল হয়।
তৃতীয় ভাষণ : সপ্তম রুকু থেকে দ্বাদশ রুকু পর্যন্ত বদর ও উহুদ যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে নাজিল হয়। অর্থাৎ প্রথম ভাষণের সাথে সাথেই নাজিল হয়।
চতুর্থ ভাষণ : ত্রয়োদশ রুকু থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত উহুদ যুদ্ধের পরে পর্যালোচনামূলক ভাষণ হিসেবে নাজিল হয়।
সম্বোধন : এ সূরায় বিশেষ করে দু’টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। এক. আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিষ্টান), দুই. এমন সব লোক যারা মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি ঈমান এনেছিল। প্রথম দলের আকিদাগত ভ্রষ্টতা ও চারিত্রিক দুষ্কৃতি সম্পর্কে সতর্কীকরণের পাশাপাশি দ্বিতীয় দলের শ্রেষ্ঠতম দলের মর্যাদা লাভ করার কারণ ও সত্যের পতাকাবাহী এবং বিশ্বমানবতার সংস্কার ও সংশোধনের দায়িত্ব অর্পণের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে।

আলোচ্য বিষয় ও উপলক্ষ্য
সামগ্রিক সূরায় চারটি উপলক্ষ্য পরিলক্ষিত হয়: ১. বদর যুদ্ধ-পরবর্তী দুঃসময় ২. ইহুদিদের ষড়যন্ত্র ৩. মুনাফিকদের আত্মপ্রকাশ ও ৪. উহুদ যুদ্ধের পর্যালোচনা।

শানে নুজুল
বর্ণিত আছে যে, যখন নাজরান প্রতিনিধিদল মহানবী সা.-এর সঙ্গে বিতর্ক করার লক্ষ্যে মদিনার দিকে রওয়ানা দিলেন, তখন আবুল হারেছা ও তার বড় ভাই কুরজ খচ্চরের পিঠে ছিল। খচ্চর হোঁচট খেলে বড় ভাই বলে উঠল ‘মুহাম্মদ ধ্বংস হোক’ (নাউযুবিল্লাহ)। আবুল হারেছা বলল, ‘তোমরা ধ্বংস হও’। কুরজ এতে বিব্রত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে আবুল হারেছা বলল, ‘ইনি সে নবী, যার আগমনবার্তা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে দেয়া হয়েছে।’ কুরজ জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে তুমি তার ওপর ঈমান আনছ না কেন?’ সে উত্তরে বলল, ‘রোমান সম্রাট আমাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে রেখেছেন, তিনি আমাকে অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে থাকেন। আমি যদি মুহাম্মদ সা.-এর ওপর ঈমান আনয়ন করি তবে আমার সব সুযোগ-সুবিধা ছিনিয়ে নিবেন, ফলে আমি বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ব।’ উল্লিখিত আয়াত আবুল হারেছার সেই ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রতিবাদে অবতীর্ন হয় এবং দুনিয়ার এ সমস্ত বস্তু পরকালীন সম্পদের তুলনায় তুচ্ছ বলে ঘোষণা করা হয়।

ব্যাখ্যা
অত্র আয়াতে ছয়টি বিষয়ের প্রতি মানুষের স্বভাবগত আকর্ষণের কথা বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়গুলো একদিকে যেমন লোভনীয় তেমনি অপরদিকে পরীক্ষার মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, اِنَّا جَعَلۡنَا مَا عَلَی الۡاَرۡضِ زِیۡنَۃً لَّهَا لِنَبۡلُوَهُمۡ اَیُّهُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا অর্থাৎ আমি পার্থিব সবকিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি মানুষকে পরীক্ষার জন্য যাতে তাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে কে শ্রেষ্ঠ? (সেটা বাছাই করা যায়) (সূরা কাহাফ : ৭)। সূরা মুলকের ২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ অর্থাৎ যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। এখানে ‘হায়াত’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবন ও জীবন পরিচালনার সকল উপায়-উপকরণ এবং আল্লাহ প্রদত্ত সকল নেয়ামত।

আলোচ্য আয়াতে সর্বপ্রথম মহিলার প্রতি আকর্ষণের কথা উল্লেখ হয়েছে। কারণ সাবালক হওয়ার পর প্রত্যেক পুরুষের সব থেকে বেশি প্রয়োজনবোধ হয় একজন সঙ্গিনীর। “Mutual attraction between man & woman and to the opposite gender is totally biological & natural phenomenon”. আদি পিতা হযরত আদম (আ) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ) থেকে শুরু করে আজ অবধি এ ধারাই চলমান। তাছাড়া রমণী পুরুষের কাছে সর্বাধিক রমণীয় ও কমনীয়। স্বয়ং নবী করিম সা. বলেছেন ‘দুনিয়ার দুটি জিনিস আমার সবচেয়ে প্রিয়: সতী নারী ও সুগন্ধি, আর সালাত আমার চোখের শীতলতা’ (সুনানে নাসাঈ-৩৯৪০)। তিনি আরো বলেন : ‘পার্থিব জীবন পুরোটাই ভোগের সামগ্রী আর সতী নারী সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সমগ্রী’ (মুসলিম-১/৪৭৫)। রাসূল সা. আরো বলেন, ‘কৃতজ্ঞ আত্মা, আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত জিহ্বা, পার্থিব ও পরকালীন কাজে সহযোগী সতী স্ত্রী মানুষের জমাকৃত সম্পদ থেকে সর্বাধিক উত্তম’ (জামী-৪৪০৯)। তবে শর্ত হলো নারীর প্রতি ভালোবাসা হতে হবে শরীয়তসম্মত ও আধিক্যবর্জিত, তবেই নারী হবে উত্তম জীবনসঙ্গিনী ও আখেরাতের সম্বল। নচেৎ নারীই হলো দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা বড় ফেতনা। রাসূল সা. বলেন, ‘আমার ইন্তেকালের পরে আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য নারী অপেক্ষা অধিক ফিতনার শঙ্কা আর কিছুতেই রেখে যাইনি।’ (বুখারি-৫০৯৬, মুসলিম-২৭৪০)। দুনিয়া ও নারীর ব্যাপারে সতর্ক করে নবী করীম সা. বলেন, ‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন, অতঃপর তিনি দেখবেন তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারী জাতির ব্যাপারে।’ (মুসলিম-২৭৪২, তিরমিজি-২১৯১)

বর্তমান অস্থির ও Paradoxical World-এ যুবসমাজের অধঃপতন ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য মুখ্য দায়ী নারীদের সাথে অবাধ মেলামেশা, Social Network-এর মাধ্যমে যোগাযোগ ও ভাব বিনিময়ের সহজলভ্যতা, তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে নারীদেরকে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের আয়োজন, ইসলামের সীমারেখাবহির্ভূত নারী পুরুষের জড়ো হওয়ার অবাধ সুযোগ, বিভিন্ন প্যাকেজের নামে তরুণ তরুণীদেরকে মোহের (illusion) জগতে ছেড়ে দেয়া, আকাশ সংস্কৃতির ভয়াল থাবা, পর্দাকে সেকেলে প্রথা হিসেবে উপস্থাপনের হীন প্রয়াস ইত্যাদি। চারপাশের যুবক-যুবতীদের দেখলে মনে হয়, তারা যেন এক অস্থির মোহে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাতের অন্ধকারই যেন তাদের খোশগল্প ও ভাব বিনিময়ের মোক্ষম সুযোগ আর দিনের আলোতেই তাদের ঘুমানোর সময়। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَّ جَعَلۡنَا نَوۡمَکُمۡ سُبَاتًا ۙ﴿۹﴾ وَّ جَعَلۡنَا الَّیۡلَ لِبَاسًا ﴿ۙ۱۰﴾ وَّ جَعَلۡنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ﴿۪۱۱﴾ অর্থাৎ তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম, রাতকে করেছি আবরণ এবং দিনকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়। (সূরা নাবা : ৯-১১)।

মানব প্রকৃতির সাথে সুশোভিতকরণের দ্বিতীয় বিষয় হলো
وَ الۡبَنِیۡنَ এটির একবচন ابن। সন্তান-সন্ততি, ড়ভভংঢ়ৎরহম। যা মা-বাবার জন্য রবের পক্ষ থেকে পরম ও কাক্সিক্ষত নেয়ামত। حب النساء এর পরপর حب البنين আনার কারণ হলো- সন্তান-সন্ততি حب النساء এর ফসল (لان البنين ثمرة حب النساء)। সন্তান-সন্ততি অহঙ্কারের কারণ। রাসূল সা. বলেন, الولد ثمرة القلب وانه مجبنة مبخلة محزنة অর্থাৎ সন্তান-সন্ততি অন্তরের ফসল, এটি পিতাদের কাপুরুষতা, কৃপণতা ও চিন্তার কারণ।

সন্তানের প্রতি মা-বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও মা-বাবার প্রতি সন্তানের অগাধ অনুরাগ একান্তই প্রাকৃতিক (Natural)। একজনের অনুপস্থিতি অপরজনকে সদা তাড়া করে ফিরে, কাছে পাওয়ার আকুলতা তাকে অস্থির করে তোলে। মা-বাবা ও সন্তান-সন্ততির অভেদ্য ভালোবাসা (Securest love) ও অকৃত্রিম অনুরাগ (Genuine Affection) নিরেট আল্লাহরই দান। সন্তান-সন্ততিই পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য ও জেনারেশনের ধারাবাহিকতার শৃঙ্খল ও প্রবাহ। আল কুরআনের ভাষায় اَلۡمَالُ وَ الۡبَنُوۡنَ زِیۡنَۃُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ الۡبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیۡرٌ عِنۡدَ رَبِّکَ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ اَمَلًا অর্থাৎ ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাক্সিক্ষত হিসেবেও উৎকৃষ্ট (সূরা কাহাফ : ৪৬)। সূরা নাহলের ৭২ নং আয়াতে বর্ণিত আছে- وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ بَنِیۡنَ وَ حَفَدَۃً وَّ رَزَقَکُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ ؕ اَفَبِالۡبَاطِلِ یُؤۡمِنُوۡنَ وَ بِنِعۡمَتِ اللّٰهِ هُمۡ یَکۡفُرُوۡنَ অর্থাৎ মহান আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য সন্তান-সন্ততি ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন আর তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন। তবুও কি তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?

পবিত্র কুরআনে البنين এর চারটি সমার্থক শব্দ মোট ৭৫ বার উল্লেখ আছে। যেমন- (১) طفل (শিশু, বালক), (২)صبي (শিশু, কিশোর), (৩) غلام (শিশু, তরুণ), (৪) ولد (শিশু, বৎস, সন্তন)। طفل শব্দটি কুরআনে ৩ বার ও এর বহুবচন اطفال আছে একবার।صبيى শব্দটি কুরআনে দুইবার, غلام শব্দটি ১২ বার এসেছে। এর দ্বিবচন غلامان কর্মকারকরূপে غلامين আছে একবার, বহুবচনে غلمان আছে একবার। ولد শব্দটি কুরআনে আছে ৩৩ বার, এর বহুবচন اولاد শব্দটি এসেছে ২২ বার। এরকম প্রিয়, নেয়ামততুল্য সন্তান-সন্ততিকে আল্লাহ তায়ালা আবার পরীক্ষার মাধ্যমও বানিয়েছেন। তিনি বলেন یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ وَ اَوۡلَادِکُمۡ عَدُوًّا لَّکُمۡ فَاحۡذَرُوۡهُمۡ ۚ وَ اِنۡ تَعۡفُوۡا وَ تَصۡفَحُوۡا وَ تَغۡفِرُوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থাকবে। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন : ১৪)
একই সূরার পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে: اِنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ অর্থাৎ তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ। আর আল্লাহ, তাঁরই নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার (সূরা তাগাবুন: ১৫)। অনেক সময় এ আদরের সন্তান-সন্ততি আল্লাহর হুকুম পালনে ও দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।

সূরা তওবার ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡهَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَهَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ جِهَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰهُ بِاَمۡرِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ অর্থাৎ বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাসো ইত্যাদি যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তবে আল্লাহর সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
সূরা মুনাফিকুনের ৯নং আয়াতে বলা হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
অর্থাৎ হে মুমিনগণ। তোমাদের প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে, যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।

তৃতীয় বিষয় হলো- وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ অর্থাৎ সোনা-রুপার রাশি রাশি স্তূপ। এখানে قناطير শব্দটি قنطار এর বহুবচন। قنطار এর পরিমাণ বর্ণনা করতে গিয়ে মুহাদ্দিসীনে কেরাম দুটি মত ব্যক্ত করেছেন।
১. গণনাযোগ্য : যেমন- হযরত উবাই বিন কাব রা. ও মুআ’য বিন জাবল রা.-এর মতে বারশত আওকিয়া। হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর মতে বারো হাজার আওকিয়া। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর মতে বারোশত দিনার। হাসান ও দাহ্হাক রা.-এর মতে বারো হাজার দেরহাম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর মতে সত্তর হাজার দিনার। সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব রা.-এর মতে আশি হাজার দেরহাম। ইমাম আতা (রহ)-এর মতে সাত হাজার দিনার। ইমাম সুদ্দী (রহ.) এর মতে আট হাজার মিছকল। ইমাম কলবী (রহ.)-এর মতে এক হাজার মিছকাল স্বর্ণ বা রৌপ্য।
২. অগণনাযোগ্য : যেমন- রাবী বিন আনাস রা. বলেন, قنطا ر অর্থ পর্যাপ্ত সম্পদ।

আবু ওবায়দা রা. বলেন, قنطار হচ্ছে এমন ওজন, যা পরিমাপ করা যায় না। ইবনে জারীর তাবারী রা.-ও এ মত পোষণ করেন। আর المقنطرة অর্থ المضعفة অর্থাৎ দ্বিগুণ, ইবনে আব্বাস রা. এ মত ব্যক্ত করেন। ইবনে কুতায়বা রা. বলেন, المقنطرة অর্থالمكملة অর্থাৎ পরিপূর্ণ (الله أعلم بمراده به)। এককথায় রাশি রাশি সম্পদের স্তূপকে বুঝানো হয়েছে। মানব মাত্রই সম্পদের প্রয়োজন। তবে সে প্রয়োজনীয়তা যেন লোভে পরিণত না হয়, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে দেয়।

কুরআনের ভাষায়,اَلۡهٰکُمُ التَّکَاثُرُحَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ অর্থাৎ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও (সূরা তাকাসুর : ১-২)। অন্য সূরায় আছে- وَیۡلٌ لِّکُلِّ هُمَزَۃٍ لُّمَزَۃِ ـ الَّذِیۡ جَمَعَ مَالًا وَّ عَدَّدَهٗ ـ یَحۡسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخۡلَدَهٗ ـ کَلَّا لَیُنۡۢبَذَنَّ فِی الۡحُطَمَۃِ ـ অর্থাৎ দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বারবার গণনা করে। সে ধারণা করে যে, তার সঞ্চিত অর্থ তাকে অমর করে রাখবে। কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (সূরা হুমাযাহ : ১-৪)। সূরা লাহাবে বর্ণিত আছে, ـ مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡهُ مَالُهٗ وَ مَا کَسَبَ تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ অর্থাৎ ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও, তার ধন-সম্পদ ও উপার্জন কোন কাজে আসেনি অর্থাৎ আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোন কাজ দেয়নি (সূরা লাহাব : ১-২)। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ অত্যধিক। কুরআনের ভাষায়, وَ اِنَّهٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ অর্থাৎ মানুষ অবশ্যই ধন সম্পদের আসক্তিতে প্রবল (সূরা আদিয়াত : ৮)। অন্য আয়াতে বর্ণিত আছে- وَ تَاۡکُلُوۡنَ التُّرَاثَ اَکۡلًا لَّمًّا ـ وَّ تُحِبُّوۡنَ الۡمَالَ حُبًّا جَمًّا অর্থাৎ এবং তোমরা উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করে ফেল আর ধনসম্পদকে অতিশয় ভালোবাসো (সূরা ফজর : ১৯-২০)। হাদিসের ভাষায়- ‘বনি আদমের যদি দুই উপত্যকা পরিমাণ সম্পদ থাকে, সে তৃতীয় উপত্যকা বাসনা করবে আর বনি আদমের পেট কবরের মাটি ছাড়া পূর্ণ হবে না। আর আল্লাহ তাওবাকারীদের অনুশোচনা কবুল করেন (বুখারি-৬৫১২)।

চতুর্থ বিষয় হচ্ছে َالۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃ অর্থাৎ প্রশিক্ষিত ঘোড়া, الخيل অর্থ ঐড়ৎংব, ঘোড়া, আর المسومة অর্থ الراعية ـ المعلمة ـ المطهمة ـ المرسلة ـ الحسان , Branded, Marked উৎকৃষ্ট, চিহ্নিত, প্রশিক্ষিত। তৎকালীন আরব ও সমকালীন বিশ্বে ঘোড়ার আলাদা কদর রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নববীতে ঘোড়ার বর্ণনা ও অনন্য বৈশিষ্ট্য বারংবার এসেছে। যেমন- সূরা আনফালের ৬০ নং আয়াতে وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ অর্থাৎ তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না।

সূরা আদিয়াতের ১-৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ـ فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ـ فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ـ فَاَثَرۡنَ بِهٖ نَقۡعًا ـ فَوَسَطۡنَ بِهٖ جَمۡعًاـ অর্থাৎ শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির, অতঃপর যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত করে, তারপর যারা অভিযান করে প্রভাতকালে, ফলে তারা তা দ্বারা ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে, অতঃপর তা দ্বারা শত্রুদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। সূরা নাহলের ৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে- وَّ الۡخَیۡلَ وَ الۡبِغَالَ وَ الۡحَمِیۡرَ لِتَرۡکَبُوۡهَا وَ زِیۡنَۃً ؕ وَ یَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ অর্থাৎ তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও।

ঘোড়া সম্পর্কে হাদিসে নববীতে বর্ণিত আছে- ‘আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ বেঁধে রেখেছেন। ঘোড়া তিন প্রকার: এক প্রকার ঘোড়া, যা দ্বারা মানুষ সওয়াব লাভ করে, আর এক প্রকার ঘোড়া যা (অসচ্ছলতার জন্য) আচ্ছাদন (ঢালস্বরূপ) হয়ে থাকে এবং অন্য প্রকার যা বোঝা স্বরূপ হয়ে থাকে। সওয়াবের ঘোড়া তো ঐ ঘোড়া, যাকে মালিক লালন পালন করে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য এবং প্রয়োজনমত তাকে জিহাদে ব্যবহার করা হয়। যা কিছু সে খায়, যা কিছু তার পেঠের ভেতরে গায়েব করে, তা সবই তার জন্য সওয়াব লিখা হয়। যদিও নতুন চারণ ভূমিতে সে তার সামনে উদ্ভাসিত হয়’ (নাসায়ী-৩৫৬৩)। অন্য রেওয়াতে আছে, মালিক তার রশি বাগান ও চারণভূমিতে লম্বা করে দেয়, সেই ঘোড়া সে রশিতে থেকে যতদূর পর্যন্ত চরবে, তার জন্য নেকি লেখা হবে। যদি সে রশি ছিঁড়ে কোনো উঁচু স্থানে চরে, তবে তার প্রত্যেক পদক্ষেপের জন্য নেকি লেখা হবে। হারিস রা.-এর রেওয়াতে আছে তার গোবরের জন্যও নেকি লেখা হবে। যদি ঐ ঘোড়া কোনো নহরে গিয়ে পানি পান করে, অথচ মালিকের পানি পান করাবার ইচ্ছা না থাকে, তবুও তা মালিকের জন্য নেকিরূপে লেখা হবে। আর যে তা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বেঁধে রাখে অথবা মানুষের কাছে চাওয়া থেকে বাঁচার জন্য এবং তার ঘাড়ে ও পিঠে পালনীয় মহান মহীয়ান আল্লাহর হকের কথা বিস্মৃত হয় না (যাকাত আদায় করে) তবে তা মালিকের জন্য আচ্ছাদন। আর ঐ ব্যক্তির জন্য পাপ, যে ব্যক্তি তাকে গর্ব করা, লোকদেখানো ও মুসলিমের সাথে শত্রুতার জন্য বাঁধে (পালন করে) (নাসায়ী-৩৫৬৪)। মূলত ঘোড়া এক বিস্ময়কর সম্ভ্রান্ত প্রাণী। যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়া এক অনন্য বাহন। জন্মের এক ঘণ্টা পরেই ঘোড়া দৌড়াতে পারে। পৃথিবীতে ৩০০ জাতেরও বেশি ঘোড়া আছে। ঘোড়া দাঁড়িয়ে ও শুয়ে উভয়ভাবে ঘুমাতে পারে। কারণ তার দেহের কাঠামো এমনভাবে তৈরি, সে পা মুড়ে বসতে পারে না, এটি তার প্রয়োজন হয় না এবং এতে তার কোনো কষ্ট বা ক্ষতিও হয় না। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঘোড়ার শরীরে সাধারণত ২০৫টি হাড় থাকে। মানুষ আর ঘোড়ার ছাঁচে গলার নিচের হাড়টি শুধুমাত্র পার্থক্য। ঘোড়ার মধ্যে এটি নেই। ঘোড়াকে পৃথিবীর চতুর্থ পছন্দনীয় পশু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ঘোড়ার দাঁত দেখেই স্ত্রী ও পুরুষ ঘোড়া শনাক্ত করা যায়। পুরুষ ঘোড়ার ৪০টি ও স্ত্রী ঘোড়ার ৩৬টি দাঁত থাকে। অনেকগুলো ঘোড়া একসাথে কখনো শুয়ে থাকে না। অন্তত একটি সজাগ থাকে আর সঙ্গীদের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে। ঘোড়ার দৃষ্টিশক্তি অনেক প্রখর। রাতে মানুষের চেয়ে ভালো দেখে। তবে আলো থেকে অন্ধকারে বা অন্ধকার থেকে আলোতে অ্যাডজাস্ট করতে মানুষের চেয়ে ঘোড়ার বেশি সময় লাগে। ঘোড়া দৈনিক ২৫ গ্যালন পানি পান করে। গরমের সময়ে আরো বেশি পানি পান করে। ঘোড়া একটি সামাজিক প্রাণী, তাই একা থাকলে নিঃসঙ্গ অনুভব করে এবং সঙ্গীর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত হয়। একবার এক ব্যক্তি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সা.! জান্নাতে কি ঘোড়া থাকবে? রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ যদি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে এতে লাল এয়াকুত পাথরের যে ঘোড়ায় চড়তে চাও, সে তোমাকে নিয়ে জান্নাতের যেখানে যেতে চাও সেখানে উড়ে নিয়ে যাবে।

পঞ্চম বিষয় হলো وَ الۡاَنۡعَامِ অর্থাৎ دابة, চতুষ্পদ প্রাণী, Four footed beast যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে ২০০ আয়াতে প্রাণী সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে এবং মোট ৩৫টি প্রাণীর নাম উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে পাখি, পোকা-মাকড়, বন্যপ্রাণী ও পোষাপ্রাণী। কয়েকটি সূরা প্রাণীর নামেও রয়েছে, যেমন- سورة البقرة (গাভী)। সরাসরি الا نعام নামেও একটি সূরা আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَ الۡاَنۡعَامَ خَلَقَهَا ۚ لَکُمۡ فِیۡهَا دِفۡءٌ وَّ مَنَافِعُ وَ مِنۡهَا تَاۡکُلُوۡنَ وَ لَکُمۡ فِیۡهَا جَمَالٌ حِیۡنَ تُرِیۡحُوۡنَ وَ حِیۡنَ تَسۡرَحُوۡنَ অর্থাৎ আর চতুষ্পদ জন্তুগুলো, তিনি তা সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে এবং সেগুলো থেকে তোমরা আহার করে থাক, আর তোমরা যখন গোধূলিলগ্নে তাদেরকে চারণভূমি হতে ঘরে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তাদের সৌন্দর্য উপভোগ কর (সূরা নাহল : ৫-৬)। সূরা আনআমের ৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে- وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا طٰٓئِرٍ یَّطِیۡرُ بِجَنَاحَیۡهِ اِلَّاۤ اُمَمٌ اَمۡثَالُکُمۡ ؕ مَا فَرَّطۡنَا فِی الۡکِتٰبِ مِنۡ شَیۡءٍ ثُمَّ اِلٰی رَبِّهِمۡ یُحۡشَرُوۡنَ অর্থাৎ আর যমিনে বিচরণশীল প্রতিটি জীব বা দুই ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মত এক একটি উম্মত। এ কিতাবে আমরা কোনো কিছুই বাদ দেইনি; তারপর তাদেরকে তাদের রবের দিকে একত্র করা হবে। সূরা নূরের ৪৫ নং আয়াতে বর্ণিত আছে, وَ اللّٰهُ خَلَقَ کُلَّ دَآبَّۃٍ مِّنۡ مَّآءٍ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰی بَطۡنِهٖ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰی رِجۡلَیۡنِ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰۤی اَرۡبَعٍ ؕ یَخۡلُقُ اللّٰهُ مَا یَشَآءُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ অর্থাৎ আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। উহাদের কতেক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতেক দু’পায়ে চলে, কতেক চলে চার পায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান। পশু-পাখির অধিকার রক্ষার ব্যাপারে হাদিসে নববীতে রাসূল সা. বারবার সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা হালাল পশু জবাই করবে, সর্বোত্তম পন্থায় করবে। জবাইয়ের বস্তু ভালোভাবে ধার দিয়ে নিবে আর পশুটিকে স্বাভাবিকভাবে প্রাণ বের হওয়ার সুযোগ দিবে।’ (মুসলিম-১৯৫৫)। সূরা গাফির-এর ৭৯ নং আয়াতে বর্ণিত আছে- اَللّٰهُ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَنۡعَامَ لِتَرۡکَبُوۡا مِنۡهَا وَ مِنۡهَا تَاۡکُلُوۡنَ অর্থাৎ আল্লাহ্ যিনি তোমাদের জন্য গবাদি-পশু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তার কিছু সংখ্যকের উপর তোমরা আরোহণ কর এবং কিছু সংখ্যক হতে তোমরা খাও। সূরা মুমিনুনের ২১ নং আয়াতে বর্ণিত আছে- وَ اِنَّ لَکُمۡ فِی الۡاَنۡعَامِ لَعِبۡرَۃً ؕ نُسۡقِیۡکُمۡ مِّمَّا فِیۡ بُطُوۡنِهَا وَ لَکُمۡ فِیۡهَا مَنَافِعُ کَثِیۡرَۃٌ وَّ مِنۡهَا تَاۡکُلُوۡنَ অর্থাৎ এবং প্রাণিকুলে তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে। তোমাদেরকে আমি ওদের উদরে যা আছে তা হতে পান করাই, এটাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা এবং তোমরা ওটা থেকে আহার কর।

ষষ্ঠ বিষয় হলো وَ الۡحَرۡثِ অর্থ الزرع والنبات ক্ষেত-খামার, চাষাবাদ, cultivation. حرث الدنيا অর্থ متاع الحياة الدنيا من مال وبنين وغيرهما ـ অর্থাৎ ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি পার্থিব উপায় উপকরণ। حرث الاخرة অর্থ العمل الصالح الباقى অর্থাৎ স্থায়ী সৎকর্ম। যেমন আল্ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- مَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ ۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ অর্থাৎ আর যে কেউ আখিরাতের ফসল কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বৃদ্ধি করে দেই এবং যে কেউ দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে ওটার কিছু অংশ দেই, আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না (সূরা শুরা : ২০)। সূরা নাহলের ১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে-یُنۡۢبِتُ لَکُمۡ بِهِ الزَّرۡعَ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ النَّخِیۡلَ وَ الۡاَعۡنَابَ وَ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ـ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ অর্থাৎ তিনি তোমাদের জন্য (পানি দ্বারা) শস্য, জায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল জন্মান। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। সূরা মুল্কের ১৫ নং আয়াতে বর্ণিত আছে-هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاکِبِهَا وَ کُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِهٖ ؕ وَ اِلَیۡهِ النُّشُوۡرُ অর্থাৎ তিনি তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা উহাতে দিগ্-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ করো। পুনরুত্থান তো তারই নিকট। আল্লাহ তায়ালা বলেন- فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ إِلَىٰ طَعَامِهِ ـ أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا ـ ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا ـ فَأَنبَتْنَا فِيهَا حَبًّا ـ وَعِنَبًا وَقَضْبًا ـ وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا ـ وَحَدَائِقَ غُلْبًا ـ وَفَاكِهَةً وَأَبًّا ـ مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ ـ অর্থাৎ মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখুক, আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমি প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং উহাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, জায়তুন, খেজুর, বহু বৃক্ষ বিশিষ্ট উদ্যান, ফল, গবাদি খাদ্য, ইহা তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের ভোগের জন্য (সূরা আবাসা : ২৪-৩২)। রাসূল সা. বলেন, ‘যার একখ- জমি রয়েছে সে যেন তা আবাদ করে যদি সে আবাদ করতে না পারে, তার উচিত, সে যেন তা অন্য কাউকে দান করে, যাতে সে আবাদ করে ভোগ করতে পারে’ (জামী-৬৫১৪)। চাষাবাদের প্রতি যেমনি উৎসাহিত করা হয়েছে, তেমনি আবার অতিমাত্রায় আসক্তিও পবীক্ষার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কিছু মানুষের পার্থিব জীবনের উপকরণ ও ব্যবহারের ভোগ্যবস্তু মাত্র। ‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখিরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত’ (সূরা আনকাবুত : ৬৪)। متاع হচ্ছে মূলত ঘ্রাণের মতোই। ঘ্রাণের যেমন বস্তুগত কোন অস্তিত্ব নেই, এটি অনংঃৎধপঃ, তেমনি আল্লাহ তায়ালা এসব কিছুকে ঘ্রাণের মতো অস্তিত্বহীন মোহের সাথে তুলনা করেছেন। দ্বীপবাসী যেমন লঞ্চ ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছে, এটি তার স্থায়ী নিবাস নয়, শুধুমাত্র গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যবহার করে, তেমনি মুসলিম ও মুমিন বান্দাও পার্থিব জীবনে উল্লিখিত সম্পদের মালিক হবে, ব্যবহার ও অর্জন করবে। কিন্তু এগুলোকেই যেন চূড়ান্ত অর্জন ও সফলতা মনে না করে। কারণ তাকে তো পার্থিব ক্ষণিকের জীবন সাঙ্গ করে অনন্ত হায়াতের সমুদ্র পানে পাড়ি দিতে হবে। এজন্য আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছেই আছে উৎকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।’ সূরা বাকারার ২৮১ নং আয়াতে বর্ণিত আছে وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا تُرۡجَعُوۡنَ فِیۡهِ اِلَی اللّٰهِ ٭۟ ثُمَّ تُوَفّٰی کُلُّ نَفۡسٍ مَّا کَسَبَتۡ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ অর্থাৎ আর তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারপর প্রত্যেককে সে যা অর্জন করেছে তা পুরোপুরি প্রদান করা হবে। আর তাদের (বিন্দু পরিমাণ) জুলুম করা হবে না। (Sense And fear a Day when you will be returned to Allah. Then every soul will be compensated for what it earned, and they will not be treated unjustly.) তিনি তো আমাদের জন্য অফুরন্ত নিয়ামতের ব্যবস্থা করে রেখেছেন, কুরআনের ভাষায়- إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا অর্থাৎ যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের উদ্যান (সূরা কাহাফ : ১০৭)। সূরা ত্বীনের ৬ নং আয়াতে বর্ণিত আছে, اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ অর্থাৎ কিন্তু তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। সূরা ফুরকানের ৭৫ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,اُولٰٓئِکَ یُجۡزَوۡنَ الۡغُرۡفَۃَ بِمَا صَبَرُوۡا وَ یُلَقَّوۡنَ فِیۡهَا تَحِیَّۃً وَّ سَلٰمًا অর্থাৎ তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেখানে অর্ভ্যথনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে।

শিক্ষণীয় বিষয়
প্রথমত, বৈষয়িক সম্পদের প্রতি আকর্ষণ প্রতিটি মানুষের সহজাত প্রকৃতি কিন্তু বিপজ্জনক বিষয় হলো, বৈষয়িক চাকচিক্যের মোহে প্রতারিত হওয়া ও পরকালের জবাবদিহিতার কথা ভুলে যাওয়া। সূরা কিয়ামাহর ২০-২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে کَلَّا بَلۡ تُحِبُّوۡنَ الۡعَاجِلَۃَ ـ وَ تَذَرُوۡنَ الۡاٰخِرَۃَ অর্থাৎ কখনো না, তোমরা প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনকে ভালোবাস এবং আখিরাতকে উপেক্ষা কর। সূরা ইনফিতারের ৬ নং আয়াতে বর্ণিত আছে, یٰۤاَیُّهَا الۡاِنۡسَانُ مَا غَرَّکَ بِرَبِّکَ الۡکَرِیۡمِ অর্থাৎ হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?

দ্বিতীয়ত, পার্থিব বিষয় ও আশ্রয়কে ব্যবহার করা ও সে সবের প্রতি আকর্ষণ মন্দ নয়। কিন্তু পার্থিব বিষয় ও আশ্রয়ের মোহের জালে আটকে পড়া এবং এসবের উপর নির্ভর করা ক্ষতিকর।

তৃতীয়ত, আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য আল্লাহ তায়ালার স্থায়ী নেয়ামতের সাথে পার্থিব ক্ষণস্থায়ী নেয়ামতের তুলনা করতে হবে। ‘কিন্তু তারা তো পার্থিব জীবনে উল্লসিত অথচ দুনিয়ার জীবন তো আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ্যবস্তু মাত্র।’ (সূরা রা’দ : ২৬)

চতুর্থত, আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহর দিকেই আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য (টষঃরসধঃব ফবংঃরহধঃরড়হ) یٰۤاَیَّتُهَا النَّفۡسُ الۡمُطۡمَئِنَّۃُ ـ ارۡجِعِیۡۤ اِلٰی رَبِّکِ رَاضِیَۃً مَّرۡضِیَّۃً ـ فَادۡخُلِیۡ فِیۡ عِبٰدِیۡ ـ وَ ادۡخُلِیۡ جَنَّتِیۡ – অর্থাৎ হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে, অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর (সূরা ফজর : ২৭-৩০)।

পঞ্চমত, পার্থিব জীবন ও জীবনোপকরণ খেল-তামাশা বৈ কিছুই নয়। সূরা আন’আমের ৩২ নং আয়াতে বর্ণিত আছে, وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّ لَهۡوٌ ؕ وَ لَلدَّارُ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ অর্থাৎ আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না? মহান আল্লাহ আমাদেরকে পার্থিব ও পরকালীন সফল ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। মহান আল্লাহর শেখানো ভাষায় আমাদের ফরিয়াদ: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ অর্থাৎ হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। (সূরা বাকারা : ২০১) আমিন।

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক