টেমি পারকিন্স |
যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট শহর নিউ হ্যাম্পশায়ারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমার পরিবার ছিল খুবই দরিদ্র। মা আমাদের খাওয়ার সময় চার্চে পাঠিয়ে দিতেন। কেননা চার্চ দরিদ্র মানুষকে খাবার দিত। এভাবে চার্চ আমার জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। মা-বাবার অধীনে একটি শহরে বসবাস, দারিদ্র্য, একঘেয়ে কৈশোর জীবন আমার দৃষ্টি ছোট করে ফেলেছিল। ফলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমি গর্ভবতী হই এবং ১৯ বছর বয়সে দুই সন্তানের মা। মেয়েরা ছিল আমার জন্য আশীর্বাদ। আমি মন্দ পথের পথিক ছিলাম। তাদের জন্য আমি সুপথে ফিরে এলাম এবং তাদের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করলাম। আমি চাচ্ছিলাম, আমি যেভাবে বড় হয়েছি আমার মেয়ে তার চেয়ে ভালো জীবন লাভ করুক। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আমি কনজারভেটিভ রাজনীতির সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ি। দীর্ঘ সময় আমি ফক্স নিউজ দেখে এবং রেডিওর আলোচনা শুনে কাটিয়েছি। কেউ আমার সামনে ইসলামের পক্ষে কথা বললে, আমি তার সঙ্গে এমনভাবে ঝগড়ায় লিপ্ত হতাম যেন আমি তার চেয়ে অনেক বেশি জানি।
এরপর সময় খুব দ্রুত চলে গেল। আমার মেয়েরা স্নাতক সম্পন্ন করার পর আমাকে ছেড়ে চলে যায়। ১৮-১৯ বছর বয়সে তারা চাকরি খুঁজে নিল এবং পৃথক বাসায় উঠল। অন্যদিকে বড় একটি ঘরে আমি একা হয়ে যাই, সব কাজ একা করতে থাকি এবং অনুভব করি সব কিছু আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে আমি জানতাম কঠোর পরিশ্রম, ঘরে ফেরা, রাতের খাবার গ্রহণ এবং তারপর সব শান্ত। শূন্য ঘরে আমার সময়টি ছিল ভীষণ অন্ধকার। আমি নিজেকে একজন মা না ভেবে, নিছক একজন ব্যক্তি ভাবার চেষ্টা করলাম এবং গভীর হতাশায় ভুগতে লাগলাম। হতাশার মধ্যেই চাকরি হারালাম। আর তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার জীবনে পরিবর্তন প্রয়োজন। আমার মালিকানাধীন সব কিছু বিক্রি করে দিলাম এবং ফ্লোরিডায় বসবাসকারী এক বন্ধুর উদ্দেশে ট্রেন ধরলাম। বিষয়টি আমার জন্য হিতেবিপরীত হলো। ফ্লোরিডায় যাওয়ার পর আমি পরিবার, বন্ধু ও অর্থ সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
কিন্তু আমি সেখানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার শিখলাম এবং চ্যাকরুমে যুক্ত হলাম। আমি আত্মিক শূন্যতা ও এ বিষয়ে নির্দেশনা খুঁজছিলাম। ‘ক্রিশ্চান-মুসলিম চ্যাক’ নামে একটি চ্যাকরুম খুঁজে পেলাম এবং একজন মুসলিমের সঙ্গে কথা হলো। তার সঙ্গে আমি দাম্ভিকের মতো ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বললাম এবং তিনি শুনলেন। আমার দুর্দশার কথা শোনার পর সে আমাকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিল। আমি তার টাকা পরিশোধ করতে পারব না জেনেও সে আমাকে অর্থ পাঠাল যেন আমি পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি। তার সাহায্য আমার চিন্তাধারা বদলে দেয় এবং আমার হৃদয়ে পরিবর্তন আসে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে ফেরার পর অন্তরে আমি আলো অনুভব করি। তখন থেকে ইসলাম সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে শুরু করি এবং বিশেষত নওমুসলিমদের গল্পগুলো দেখতে থাকি। আমি ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমার মুসলিম বন্ধু আমাকে তার মাতৃভূমি মিসর ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানায়।
কিছুটা দ্বিধা নিয়েই আমি মিসর যেতে রাজি হলাম। মিসরে গিয়ে আমার অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হলো। যেদিন মিসর পৌঁছলাম, সেদিন সকালে প্রথমবার আজান শুনলাম এবং কাঁদলাম। এরপর দেখলাম মানুষ রাস্তায়, দোকানে এবং যে যেখানে পারছে নামাজ আদায় করছে। স্রষ্টার প্রতি তাদের নিঃসংকোচ ভালোবাসার প্রকাশ দেখে আমি আবারও কাঁদলাম। আমি এটাই চাইতাম, নিজের জীবনেই চাইতাম। মুসলমানের জীবন দেখে আমার ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রবল হয় এবং যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করি।
আমি মনে-প্রাণে চাইছিলাম জীবনে শৃঙ্খলা আসুক, জীবন হোক রুটিন মাফিক। ইসলাম মানুষকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে জীবনের রুটিন দিয়েছে। আমি চাইছিলাম জীবনে নিয়ন্ত্রণ আসুক। ইসলাম মদ ও বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। মদ ও বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক আমার জীবনকে বিধ্বস্ত করেছিল। ইসলামের সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল জীবন আমার চোখ খুলে দেয়। মিসরে আসার এক সপ্তাহ পর আমি কলেমা শাহাদাত পাঠ করি। আল-হামদুলিল্লাহ!