মহিউদ্দীন কাসেমী |
হাশরের মাঠ সরগমর। বিচার শুরু হবে। ভয়াবহ পরিস্থিতি। সূর্য মাথার ওপরে। সবাই ভয়ে এতটাই তটস্ত যে, সকলে উলঙ্গ থাকা সত্ত্বেও কউ কারও দিকে তাকানোর কথা ভাবতেও পারছে না। সকল মানুষ, এমনকি সকল নবী-রাসুল গর্যন্ত ইয়া নাফসী করবে। তখন আমাদের নবী উম্মতী উম্মতী করবেন। উম্মতের প্রতি এত দয়া-মায়া-মহব্বত থাকার পরও কিছু কিছু মানুষকে বলেছেন তারা আমার উম্মতভুক্ত নয়। উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় মানে কাফের হয়ে যায়নি; তবুও রাসুল (সা.) এর এই ধমকি বিরাট বিষয়।
কাদেরকে রাসুল সা. উম্মতের মধ্য হতে খারিজ করে দিয়েছেন? এখানে একটি তালিকা করেছি। আরও থাকতে পারে।
১. রাসুল সা. ইরশাদ করেন:
فمنْ رغِب عَنْ سُنَّتِي فَلَيسَ مِنِّى
“যে আমার সুন্নত হতে বিমুখ হয়ে যাবে, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৪৭৭৬)
২. রাসুল সা. বলেন:
لَيْسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ لَمْ يُجِلَّ كَبِيرَنَا وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ لِعَالِمِنَا حَقَّهُ
“সে আমার উম্মতভুক্ত নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটোকে স্নেহ করে না এবং আলেমদের হক জানে না।” (মাজমাউয যাওয়াইদ: খ.৮, পৃ.১৪)
৩. রাসুল সা. বলেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ ، وَمَنْ أَتَى كَاهِنًا ، فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ﷺ
“যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে নিজের ভাগ্যের ভালো-মন্দ অথবা যার ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি উড়ানো হল, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করল অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি জাদু করল অথবা যার জন্য জাদু করা হল অথবা যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে গেল অতঃপর গণক যা বলল তা বিশ্বাস করল, সে ব্যক্তি মূলত মুহাম্মদ সা. এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করল।” (মাজমাউয যাওয়াইদ: খ.৫, পৃ. ১২০)
৪. রাসুল সা. ইরশাদ করেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ، وَلَا بِالنَّصَارَى، فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ، وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ
“যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি ও নাসারাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না। কারণ ইহুদিদের অভিবাদন হল, আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা আর নাসারাদের অভিবাদন হল, হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা।” (সুনানে তিরমিযি, হাদিস ২৬৩৮)
৫. রাসুল সা. ইরশাদ করেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِالرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ، وَلَا مَنْ تَشَبَّهَ بِالنِّسَاءِ مِنَ الرِّجَالِ
“যে সব নারী পুরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (মুসনাদে আহমদ : খ.২, পৃ.৬৫৮০)
৬. রাসুল সা. ইরশাদ করেন:
مَنْ غشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا
“যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০১)
৭. রাসুল সা. বলেন:
مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلَاحَ ، فَلَيْسَ مِنَّا ، وَمَنْ غَشَّنَا ، فَلَيْسَ مِنَّا
“যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় আর যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০২)
৮. নবী কারিম সা. ইরশাদ করেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ حَلَقَ وَمَنْ سَلَقَ وَمَنْ خَرَقَ
“মৃত্যুশোক প্রকাশে যে মহিলা মাথা মুড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩১৩০)
৯. রাসুল সা. বলেন:
مَنْ لَمْ يَأْخُذْ شَارِبَهُ فَلَيْسَ مِنَّا
“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সুনানে তিরমিযি, হাদিস ২৬৫৮)
১০. রাসুল সা. বলেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيِّدِهِ
“যে ব্যক্তি কোনো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২১৭৫)
১১. রাসুল সা. বলেন:
مَنِ انْتَهَبَ نُهْبَةً مَشْهُورَةً فَلَيْسَ مِنَّا
“যে ব্যক্তি অন্যের মাল ছিনতাই করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৩৪০)
১২. নবী কারিম সা. বলেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ
“যে ব্যক্তি সুর করে কুরআন তেলাওয়াত করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহিহ বুখারী হাদিস, ৭০১৯)
এখানে সুর বলতে মনোযোগিতা, তাজবীদ, নিয়মকানুন ও বিশুদ্ধ তেলাওয়াত উদ্দেশ্য। এবং যে তেলাওয়াতের মাধ্যমে মনের প্রশান্তি ও সুখ অনুভব করা যায়। শুধু নামকাওয়াস্তে মুখে মুখে তেলাওয়াত করা নয়।
১৩. রাসুল সা. ইরশাদ করেন:
اسْمَعُوا هَلْ سَمِعْتُمْ أَنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ فَمَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ وَلَيْسَ بِوَارِدٍ عَلَىَّ الْحَوْضَ وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ وَهُوَ وَارِدٌ عَلَىَّ الْحَوْضَ
“তোমরা শোনো, তোমরা কি শুনেছো যে, আমার মৃত্যুর পরে শিগগির এমন কিছু শাসক প্রকাশ পাবে, যারা তাদের কাছে যাবে এবং তাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে আর তাদের অত্যাচারে সহযোগিতা করবে তারা আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের নই। তারা হাওজে কাওসারে আমার নিকটে আসতে পারবে না। কিন্তু যারা তাদের কাছে যাবে না, তাদের জুলুমের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবে না এবং তাদের মিথ্যাচারের সমর্থন করবে না, তারা আমার দলভুক্ত, আমিও তাদের; তারা হাওজে কাওসারে আমার কাছে আসতে পারবে।” (সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২৬২)
১৪. রাসুল সা. বলেন:
لَيْسَ مِنّا مَنْ دَعَا إِلَى عَصَبِيّةٍ، وَلَيْسَ مِنّا مَنْ قَاتَلَ عَلَى عَصَبِيّةٍ، وَلَيْسَ مِنّا مَنْ مَاتَ عَلَى عَصَبِيّةٍ
“যে ব্যক্তি সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে বা এই কারণে যুদ্ধ করে বা এর উপর মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫১২১)
লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।