আরমান ওমার |
ঈমান মজবুত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে তাগূতকে বর্জন করা। তাগূতকে বর্জন না করলে যতই নামাজ-রোজা পালন করা হোক না কেন, ঈমান মজবুত হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওতাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন: “অতএব যে কেউ তাগূতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, সে এমন মজবুত রশি ধরেছে যা কখনও ছিড়বে না।” [সূরা বাকারা- ২৫৬]
এখন আমরা জানবো, তাগূত কী?
যারা আল্লাহর অবাধ্য হয়, তারা মূলত দুইভাবে অবাধ্য হয়। এক. সে আল্লাহকে স্বীকার করে ঠিক, কিন্তু আল্লাহর অবাধ্য হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়। তাকে বলা হয় ফাসিক। দুই. যে আল্লাহকে স্বীকার করে না, অস্বীকার করে সে কাফির।
যে নিজে ফাসিক এবং মানুষকে ফাসিক বানানোর চেষ্টা করে সে তাগূত। তেমনি যে নিজে কাফির এবং মানুষকে কাফির বানানোর চেষ্টা করে, সেও তাগূত। অর্থাৎ যে বা যারা পাপাচারের দিকে আহবান করে, কুফরের দিকে আহবান করে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ‘ইলাহ’ মেনে নিতে বলে, সেই হলো তাগূত। এমনকি সেটা যদি নিজের নফসও হয়, তাহলে সেটাও তাগূত। “আর আমি আমার নফসকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নফস মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে” [সূরা ইউসুফ: ৫৩]
আমরা যদি নিজের নফসকে মেনে চলি, তাহলে আমরা যেন নফসকেই ‘ইলাহ’ বানিয়ে ফেললাম। আল্লাহ বলেন: “তুমি কি দেখেছ যে সে তার কুপ্রবৃত্তিকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে?” [সূরা গাসিয়া: ২৩] শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ করতে যদি কেউ বাধ্য করে, শরীয়ত মেনে চলতে যদি কেউ বাধা দেয়; হোক সেটা বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে, তাহলে সেও তাগূত।
আল্লাহ বলেন: “যখন তাদেরকে বলা হলো, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা মেনে চল, তখন তারা বলল, আমাদের বাপ-দাদাকে যা মেনে চলতে দেখেছি আমরা তাই মানবো।” [সূরা বাকারা: ১৭০] যদি কোনো শাসক খোদায়ী আসনে বসে হুকুম দেয়, যে হুকুম শরীয়ত বিরোধী, তাহলে তাকে বর্জন করা হলো তাগূতের বর্জন। কুরআনের আল্লাহ ফিরাউনকে ‘তাগূত’ বলেছেন। আল্লাহ বলেন: “হে মূসা! ফিরাউনের কাছে যাও। নিশ্চয়ই সে তাগূত- সীমালঙ্ঘন করেছে।” [সূরা তোয়াহা: ২৪]
চাকরি চলে যাবার ভয়ে যদি কেউ হক্ব কথা বলতে ভয় পায়, তাহলে তো সে আল্লাহকে ‘রিযিকদাতা’ মানলো না; উল্টো সে তাগূতের অনুসরণ করলো। আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনতে হলে তাগূতকে বর্জন করতে হবে। এজন্য আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন: “আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট নবী-রাসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিয়ে- তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর।” [সূরা আন নাহল- ৩৬]
এককথায়, আল্লাহকে মানতে যে বা যারা এসে জবরদস্তি করবে, বাধা দান করবে, তারা হলো তাগূত। তাদেরকে বর্জন করে আল্লাহকে মানা হল ঈমানের দাবী।
লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।