মহিউদ্দিন রূপম|
প্রায় প্রত্যেকটি হারাম কাজেরই অনেকগুলো দরজা আছে। এর অন্যতম একটি দরজা হলো, হালাল দরজা। কাজটি আপাত দৃষ্টিতে সাওয়াবের মনে হবে। অপ্রতিরোধ্য যুক্তির অভাব হবে না আপনার কাছে। হয়ত এর স্বপক্ষে দলীল প্রমাণও পেয়ে যাবেন। এভাবে আপনি সেই দরজাটি যখন খুলে দেবেন, ধীরে ধীরে হারামের জগতে প্রবেশ করতে শুরু করবেন।
শয়তান আমাদের মতো অস্থির প্রবণ নয়। সে অনেক ধৈর্যশীল, চাটুকার জীন। প্রতিটি কদম সে হিসেব করে ফেলে। তবে প্রত্যেক চক্রান্তেই একটি অপরিবর্তনীয় নীতি অনুসরণ করে সে। আর তা হলো ইস্তিদরাজ; সহজ বাংলায় যাকে বলে, ‘ধীরে ধীরে পাকড়াও করা’। বার্সিসার গল্প আমরা অনেকেই জানি।
ধ্বংসের আগে বার্সিসার পরিচয় কী ছিল? ইবাদত-গুজার এক বান্দা। যার নিজের একটি ইবাদত-খানা আছে। সেখানে দিবারাত্রি আল্লাহর আনুগত্য করে সে। ইবাদতের প্রতি তার ঝোঁক এতটাই প্রবল ছিল, গোটা এলাকায় এক নামে পরিচিত ছিল বার্সিসা। দ্বীনের খেদমতের নিয়তে সে এক পরনারীকে আশ্রয় দিয়েছিল। ভাইয়েরা জিহাদের উদ্দেশ্যে সফরে যাবে, তাই বোনের দেখভালের দায়িত্ব তাকে দিয়ে যায়। পরিশেষে তার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? সে যিনায় লিপ্ত হয়, প্রমাণ লুকাতে নারী-শিশু দু’জনকেই হত্যা করে, সবশেষে মৃত্যুর পরাকাষ্ঠায় যাবার আগ মুহূর্তে আল্লাহর সাথে কুফরি করে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। এভাবে আল্লাহর খাঁটি বান্দা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
শয়তান সবার ক্ষেত্রে পর নারীকে ব্যক্তির দোরগোড়ায় হাজির করবে না। সে মানুষের দুর্বলতা ভেদে নানান উপায় অবলম্বন করে। এটা হতে পারে সুদী ঋণ, যে ঋণ না নিলে আপনার বিশাল স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। এটা হতে একটি হারাম ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি, যা হাতছাড়া করলে আপনার বিশাল প্রোফিট মিস হয়ে যাবে। হতে পারে মাহরাম ছাড়া একটি ট্রিপ, যেখানে না গেলে আপনার ক্লাসে লজ্জিত হতে হবে। হতে পারে কোনো এ্যাসাইনমেন্ট, ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ের সহায়তা না নিলে একাকী করা কঠিন হয়ে যাবে।
আবার এটা হতে পারে ফেসবুকের ইনবক্স কিংবা কমেন্ট বক্স, যেখানে পর নারীদের সহায়তার নামে দীর্ঘ আলোচনা করা। এভাবে ক্ষণিকের দেখা, দুই মিনিটের বাক্য বিনিময় নানান কিছু। আসলে শয়তান আমাদের গোপন মুহূর্তগুলো দেখে। সে জানে গোপনে আমরা কে কী করি। কোন বিষয়গুলোতে আমরা বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি- সে দেখে। এভাবে ব্যক্তির দুর্বলতা বুঝে ওয়াসওয়াসার তীর ছুড়ে দেয়।
ব্যক্তি যদি আগে থেকেই সচেতন না থাকে, তাহলে সেই তীর তার পায়ে গিয়ে বিঁধে। বিঁধে যাওয়া তীর ছাড়িয়ে সে যদি উঠে না দাঁড়ায়, তাহলে পরবর্তী তীরটি লাগে হাতে। এভাবে হাত পা দুটোই যখন পঙ্গু হয়ে যায়, তখন ব্যক্তি আর হারাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।