মু. সাইফুল ইসলাম |
তুরস্কের সবচেয়ে বড় মসজিদটির নাম চামলিজা মসজিদ। অনেকেই যাকে আদর করে ‘এরদোয়ান মসজিদ’ বলে ডাকে। সেলজুক ও উসমানী নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে আধুনিক শিল্পের সমন্বয়ে ২০১৯ সালে নির্মাণ শেষ হওয়া ‘বুয়ুক চামলিজা জামি’ (তার্কিশ নাম) মসজিদটিতে ৬৩ হাজার মুসল্লী একসাথে নামাজ পড়তে পারে।
এটিকে কেবল মসজিদ বললে ভুল হবে, ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপর নির্মিত এই মসজিদকে একটি কমপ্লেক্সও বলা চলে। এতে নামাজের স্থানের পাশাপাশি রয়েছে জাদুঘর, শিল্প গ্যালারী, গ্রন্থাগার, হলরুম, শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফুল-বাগিচা এবং ৩৫০০টি গাড়ির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পার্কিং।
বাহার মিজরাক ও হায়রিয়ে গুল ততু (Bahar Mızrak and Hayriye Gül Totu) নামের দুইজন নারী আর্কিটেক্টের করা নকশায় তৈরি মসজিদটি ইস্তানবুলের প্রায় সব জায়গা থেকেই দেখা যায়।
মসজিদটির নির্মাণ শৈলিতে ইসলাম ও তুরস্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গেঁথে দিয়ে এই দুই নারী প্রকৌশলী নিজেদের যোগ্যতার জানান দিয়েছেন।
ঈমানের ৬ শর্তকে তুলে ধরতে ৬টি মিনার জুড়ে দিয়েছেন মসজিদটির গায়ে। ১০৭১ মিটার লম্বা চারটি মিনার আনাতোলিয়ায় তুর্কিদের প্রথম বিজয়কে স্মরণ করিয়ে দেবে। ১০৭১ সালে ‘মানজিকারট’ যুদ্ধে বাইজানটাইনের সঙ্গে সেলজুক তুর্কিরা জয় লাভ করে।
৭২ মিটার উঁচু বড় গম্বুজটি ঐতিহাসিকভাবে ইস্তানবুলে বসবাসরত ৭২টি জাতিগোষ্ঠির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ৩৪ মিটার ব্যাসার্ধের এ গম্বুজটি একই সঙ্গে আধুনিক ইস্তানবুলের আক্ষরিক পরিচয় বহন করে (তুরস্কের প্রতিটি শহরের এক একটি কোড রয়েছে। ইস্তানবুলের কোড নম্বর ৩৪)
গম্বুজের ভেতরের অংশে ১৬টি তুর্কি সাম্রাজ্যের স্মরণে ১৬টি অংশে ভাগ করে আল্লাহর গুণবাচক নাম লেখা হয়েছে। গম্বুজের সাড়ে ৪ টন ওজনের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাঁদ-তারা খচিত দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের দরজা, জানালা, দেয়ার, ছাদ সব কিছুতেই রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া।
চলন্ত সিড়ি দিয়ে উঠে মসজিদটির আঙিনায় দাঁড়ালে একনজরে বসফরাসকে বুকে ধারণকারী ইস্তাম্বুলের সিংহভাগ দেখা যায়। আর মসজিদের অভ্যন্তরে বসলে কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করে, মনিবের কৃতজ্ঞার্থে সেজদায় মস্তক অবনত হয়ে আসে।
ওসমানী সুনতানদের অনেকেই ইস্তানবুলে বড় বড় মসজিদ নির্মান করে গেছেন। এরমধ্যে সুলতান ফাতিহ এর সময়ে তৈরিকৃত ‘ফাতিহ জামি’, সুলতান সুলেইমান এর সময়ে তৈরিকৃত ‘সুলেইমানিয়ে জামি’, সুলতান আহমেদের সময়ে নির্মিত ‘আহমেত জামি (ব্লু মসজিদ)’ ইস্তানবুলের অন্যতম বড় নিদর্শন।
তুর্কির অপরাপর শাসকদের ধারাবাহিকতায় তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের আমলে নির্মিত এই ‘বুয়ুক চামলিজা জামি’ ঐতিহাসিক ঐ মসজিদগুলো থেকেও অনেক বড় এবং তা নতুন আরেকটি নিদর্শন হিসেবে যুক্ত হলো।
মসজিদটির উদ্বোধনও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে হাজারো মুসল্লীর উপস্থিতিতে করেছেন।
ও হ্যাঁ, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বাড়ির নিকটে কিংবা উনার তত্ত্বাবধানে নির্মিত বলে হয়তো স্থানীয়রা এই মসজিদকে এরদোয়ান জামি (মসজিদ) বলে ডাকে।
লেখক: পড়ুয়া | মেরিটাইম ‘ল’ (এলএলএম) | আংকারা ইউনিভার্সিটি | তুরস্ক