সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের একমাত্র মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। দুরুদ পেশ করি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর।
প্রিয় বন্ধুরা, আজকের সময়ে এসে মুসলিমবিশ্ব সবচেয়ে বড় যে সংকটটি মোকাবেলা করছে, তাহলো আমাদের মুসলিম যুবক-যুবতীদের একটি বড় অংশের চরিত্রই এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে আমাদের চরিত্র ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। আমি যখন পত্রপত্রিকায় আমাদের যুব প্রজন্মের নানা খবরাখবর পড়ি, আমার বুকটা ভেঙে যায়। আমি পেরেশান হয়ে যাই, ভাবি, মুসলিম উম্মাহ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে? কেউ কি ভাবতে পারে যে, একজন মুসলিম যুবক তার পরমাত্মীয়দের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে, অথচ তাই হচ্ছে। মুসলমান যুবকেরা মদ্যসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা চুরি করছে। মুসলিম যুবক-যুবতীরা এখন অহরহ তাদের বয়স্ক পরিজনদেরকে অশ্রদ্ধা করছে, অপমান করছে। মুসলমানদের বাজে চরিত্র এখন সর্বত্র আর সবভাবেই প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। অথচ আমাদের রাসূল (সা.)কে দুনিয়াতে পাঠানোই হয়েছিল মানুষকে সুপথে নিয়ে আসার জন্য, নৈতিকভাবে সংশোধন করে মানুষকে সৎ ব্যক্তিত্বে পরিণত করার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা এর পুরোই বিপরীত। আমরা সভ্যতার দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেলেও চরিত্রের দিক থেকে এখন ধ্বংসের মুখোমুখি।
আমরা এখন অন্যকে সমালোচনা করার নেশায় আসক্ত। দিনে রাতে সবসময় আমরা অপরকে অভিযুক্ত করে যাই। কিন্তু আমরা কি করছি, কেন করছি তা কি ভেবে দেখেছি? মুসলমানরা এই সমালোচনা চর্চা করার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে? মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল সন্তানদেরকে সঠিক ইসলামিক শিক্ষা প্রদান করা এবং নৈতিক চরিত্রের ভিত্তিমূল গড়ে দেয়া। তারা কোন পদ্ধতিতে পড়াশুনা করছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং যে পদ্ধতিতেই তারা পড়াশুনা করুক এর মাঝেই তারা যেন নীতিবান ও চরিত্রবান মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে- এটা নিশ্চিত করা জরুরি। তারা যেন কখনোই মিথ্যা কথা না বলে, কাউকে না ঠকায়ে, অপরিচিত মহিলার দিকে তাকিয়ে না থেকে। তারা যদি কোন দোকানের দায়িত্ব পায়, তাহলে যেন সেখান থেকে ৫ পয়সাও আত্মসাৎ না করে।
যে জনগোষ্ঠী নৈতিকতায় অগ্রসর হয় তারাই উন্নতি করতে পারে। মানব ইতিহাসে এই সত্য বার বার প্রমাণিত হয়েছে। আর যে জনগোষ্ঠী নৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তারা সবসময়ই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এবং কখনোই উন্নতি করতে পারে না। সে কারণে আমাদের সন্তানদের ভেতরে ভালো ভালো অভ্যাস ও চর্চাগুলো ঢুকিয়ে দিতে হবে। আমাদের উম্মাহকে এগিয়ে নিতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছি যখন আমরা অনেকেই আমাদের সন্তানদেরকে ৬-৭ বছর বয়সে মক্তবে পাঠাচ্ছি। কিন্তু যখন ১২ বছরে তারা পৌঁছে যাচ্ছে তখন আবার তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার সেই প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দিচ্ছি। স্কুলে যাওয়ার পর সেই বাচ্চাগুলোর সাথে কুরআন বা ইসলামিক সাহিত্যের সাথে আর কোনো সম্পর্কও থাকছে না। অথচ শিক্ষাবিদরা বলছেন, ১২-২৪ বছর বয়সেই মানুষ বেশি মাত্রায় জ্ঞান ভেতরে নিতে পারে। তাই এই সময়ে কোন সন্তান কী শিখছে, সেই বিষয়ে যদি গুরুত্ব না দেয়া হয় বা অবহেলা করা হয়, কিংবা যদি এই সময়ে তাকে ইসলামের সঠিক শিক্ষাগুলো না দেয়া হয় তাহলে সে ভবিষ্যতে সেই সন্তানটি ইসলামের পথে অটল নাও থাকতে পারে।
রাসূল (সা.) বড় জিনিস তো বটেই, এমনকি অনেক ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতেন। তিনি শিশুদের বড় হওয়ার ঘটনাবলিকে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। একবার তার নাতি হুসাইন (রা.) একবার দান বা সাদাকার জন্য বরাদ্দ একটি খেজুর তার মুখে তুলে নিলেন। রাসূল (সা.) নাতির মুখে আঙুল ঢুকিয়ে তাকে বমি করাতে বাধ্য করলেন। তিনি বললেন, এই খাবারটি সাদাকার উপকরণ হিসেবে নির্ধারিত তাই তুমি এটা খেতে পারবে না।
এই ঘটনাটাই যদি আমাদের সামনে ঘটতো আমরা কি করতাম? হয়তো আমরা বলতাম, “থাক, ছোট একটা বাচ্চা, একটা খেজুর খেয়ে ফেললে কিই বা এমন ক্ষতি হবে? যখন সে বড় হবে তখন এমনিতেই হারাম আর হালালের পার্থক্য বুঝে যাবে।” কিন্তু রাসূল (সা.) তা করেননি। তিনি সাথে সাথেই হুসাইন (রা.) কে থামিয়ে দিয়েছিলেন।
আরেক দিনের ঘটনা। একটি ছেলে রাসূলের (সা.) সাথে খাবার খাচ্ছিলো। সে তার সামনে রাখা খাবারটি না খেয়ে বরং অন্যদের সামনে রাখা প্লেট থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছিলো। তাই রাসূল (সা.) খুব মৃদু ভাষায় তাকে বোঝালেন, “শোন বাবা, খাবার খাওয়ার আগে বলবে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। তারপর ডান হাত দিয়ে খাবে। আর তোমার সামনে যা আছে সেখান থেকেই খাবে।”
এই ঘটনা প্রমাণ করে রাসূল (সা.) প্রায়শই ছোটদের সাথে বসতেন এবং তাদের খাদ্যাভ্যাসকে লক্ষ্য করতেন। আমরা কি তা করি? এখনকার সময়ের বাচ্চারা হাঁটতে হাঁটতে খায়, দাঁড়িয়ে খায়, স্কুলে যাওয়ার পথেও খায়। আমরা তাদেরকে এটুকুও বলি না যে, এভাবে খেও না, এটা মুসলমানদের খাবারের আদবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
রাসূলের (সা.) গোটা জীবনে আমরা একটি আদর্শ মানুষের জীবনপদ্ধতির পূর্ণ প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। রাসূল (সা.) আমাদেরকে শিখিয়েছেন আমাদের এই জীবনটা ভীষণ রকম মূল্যবান। আমরা যদি মুমিনের জীবনধারাকে অগ্রাহ্য করি, এ ব্যাপারে যত্নবান না হই, তাহলে আমাদের সন্তানেরাও অনৈসলামিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে- আর এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।
বন্ধুরা আমার,
আমি এখন মসজিদে বসে আছি এবং এখানেই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমাদের সমাজটা এখন পতনের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের সন্তানেরা, আমাদের যুবকেরা ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বস্তু জগতের লোভের ফাঁদে পড়ে এক মোহগ্রস্ত জীবনের পেছনে দৌড়াচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে মুসলিম পিতা-মাতার জন্য এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানদেরকে ইসলামের আলোকে লালন পালন করা।
একগুচ্ছ নৈতিকতা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মিলে একটি সুন্দর জীবন রচিত হয়। রাসূল (সা.)-কে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল মানুষকে সুচরিত্রের বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার জন্য। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার সাহাবিদের মধ্যে সেই অনুপম চরিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছিলেন। আজ অবধি রাসূলের (সা.) সাহাবিদের মত উন্নত চরিত্রের দ্বিতীয় কোন দৃষ্টান্ত বিশ্ব ইতিহাসে পাওয়া যায়নি।
হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) হজরত আলীর (রা.) মতো চরিত্রবান মানুষ আর দেখা যায় না। এই সাহাবিগণ সবসময় নিজের চরিত্রের উন্নয়নে কাজ করেছেন, ক্রমাগতভাবে আরও মানসম্পন্ন মানুষে পরিণত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটাও ঠিক যে, তারা রাসূলের (সা.) সাহচর্য পেয়েছিলেন, তার কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষাও পেয়েছিলেন। আর এ কারণেই তাদের চরিত্র এতটা উৎকর্ষতায় পৌঁছে গিয়েছিল।
রাসূলের (সা.) ওফাতের পর সাহাবিরা আর তার সাহচর্য পাননি। কিন্তু এরপরও তারা জীবনের বাকি সময়ে আর কখনো মিথ্যা কথা বলেননি, কারও ওপর জুলুম করেননি। যদি অজ্ঞতাবশত বা অবচেতন মনে তারা কোন অন্যায় করেও ফেলতেন, তাহলে পরক্ষণেই তারা ভীষণ রকম অনুতপ্তও হতেন। একবার হজরত আবু বকর (রা.) একজনের সাথে একটু কড়া ভাষায় কথা বললেন। সাথে সাথেই তিনি তার জিহবাটাকে টেনে ধরলেন এবং নিজেকে পরিহাস করে বললেন, কিভাবে আমার মুসলমান একজন ভাইকে আমি এতটা রূঢ় ভাষায় কথাটি বলতে পারলাম। অথচ আজকের দিনে এসে আমরা হরহামেশাই মিথ্যা কথা বলি, গল্পে গুজবে পরিহাস করি, গিবত করি। এগুলো করার সময় একটাবারের জন্যও আমরা ভাবি না যে, এতে একজন মুসলমান কষ্টও পেতে পারে।
এ কারণে এই মুহূর্তে মুসলিম পিতা-মাতার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানদের ভেতরে ইসলামের শিক্ষাকে গেঁথে দেয়া এবং তাদের ব্যবহারিক জীবনে ইসলামিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্যে সমুন্নত রাখা। আমাদের চরিত্র এতটাই উন্নত হতে হবে যাতে মানুষ সেই চরিত্রকে দেখেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অথচ আমাদের বর্তমান চরিত্র এর অনেকটাই বিপরীত।
সম্প্রতি ড্যানিশ একটি পত্রিকায় রাসূল (সা.)কে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকার প্রতিবাদে ভারতের লাখনৌতে একটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ চলাকালে মুসলমানেরা খুবই বাজে শ্লোগান দেয়। শুধু তাই নয়, তারা এই কর্মসূচি পালনকালে আশপাশের সব দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। এমনকি অমুসলিম অসংখ্য নাগরিকের দোকান, পার্ক করা গাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনাও ভাঙচুর করা হয়। এগুলো নিঃসন্দেহে বড় আকারের অবিবেচনাপ্রসূত আচরণ। একটি কার্টুনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনি নিরীহ কোন মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস করতে পারেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স সরকারের একজন মন্ত্রী সেই দেশে মুসলিম অভিবাসী যুবকদেরকে নিয়ে একটি বাজে মন্তব্য করার পর এর প্রতিবাদে প্যারিসে ১০ হাজার গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এই ঘটনাগুলো যখন চলছিল, তখন আমি ফ্রান্সের সেইন্ট ডেনিসে সফরে ছিলাম। সেখানকার একটি মসজিদের প্রতিষ্ঠার ১ শ’ বছর উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে আমার সাথে ফ্রান্স সরকারের দু’জন প্রতিনিধিও অংশ নিচ্ছিলেন। তারা একটা সময়ে জানতে পারলেন যে, ভারত থেকে একজন আলেম এই অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তারপর তারা আমার কাছে এলেন এবং সবার আগেই এই গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে আমার অভিমত জানতে চাইলেন। ইসলাম এই ব্যাপারে কী অবস্থান নিয়েছে তাও জানার আগ্রহ ছিল তাদের। আমি সেদিনও তাদেরকে বলেছিলাম যে, এই ধরনের কার্যক্রমের সাথে ইসলামের ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। যা অন্যায় তাকে অন্যায় বলতেই হবে। কখনো কখনো আমরা মুসলমানদের প্রতি দরদ দেখানোর অংশ হিসেবে মুসলমানদের অনেক অন্যায়কে ভিন্নভাবে আড়াল করার চেষ্টা করি। এটা ঠিক নয়, যা ভুল, যা অন্যায় তাকে অন্যায় বলতেই হবে, তা যে ব্যক্তিই করুক না কেন।
আমাদেরকে মধ্যমপন্থা শেখানো হয়েছে। রাসূল (সা.) এর বিরুদ্ধে মক্কায় কি জঘন্য অন্যায় ও অনাচার করা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। তাকে হত্যা করার জন্য রাস্তায় কাঁটা ফেলে রাখা হতো, অথচ তিনি তার সাহাবিদেরকে এর বিরুদ্ধে কোনো সহিংস কর্মসূচি পালন করতে দেননি। বরং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে বৃদ্ধা মহিলা নবীজির (সা.) পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো, সেই মহিলা অসুস্থ হওয়ার পর রাসূল (সা.) তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। এমনটাই ছিল তার চরিত্র। তিনি বরং সেই বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করেছিলেন, গত কয়েক দিন আপনি কেন রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখেননি। মহিলা প্রশ্ন করলো, আপনি কে? রাসূল (সা.) উত্তরে বলেছিলেন, আমি সেই মোহাম্মদ, যাকে হত্যা করার জন্য আপনি প্রতিদিন পথে কাঁটা ফেলে রাখেন। মহিলা রাসূলের (সা.) কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
আমাদের রাসূল (সা.) ছিলেন আদর্শ চরিত্রের সর্বোত্তম উদাহরণ। তায়েফে দাওয়াত দিতে গিয়ে যখন সেখানকার লোকেরা তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে দেয়, তখন ফেরেশতা তার কাছে তায়েফবাসীকে শাস্তি দেয়ার অনুমতি চায়। রাসূল (সা.) সেদিন অনুমতি দিলেই ফেরেশতা দুই দিকের পাহাড় দিয়ে পিষে তায়েফের বনু সাকিফ গোত্রকে ধ্বংস করে দিতেন। কিন্তু রাসূল (সা.) সেই অনুমতি দেননি। বরং তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ আপনি তাদেরকে হেদায়েত দান করুন।’ রাসূল (সা.) কখনোই কারও প্রতি প্রতিহিংসা দেখাননি কারণ তিনি ছিলেন গোটা মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ। আর মানুষকে ইসলামের সত্যময় সৌন্দর্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই তাকে প্রেরণ করা হয়েছে।
একজন প্রকৃত মুসলিমের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো ধৈর্য, ধীর স্থিরতা এবং উন্নত চরিত্র। মুসলমানদেরকে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, অন্যকেও সচেতন করতে হবে। মুসলমানদেরকে সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জগুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। কিন্তু মুসলমানরা সেই উপলব্ধি থেকে আজ অনেকটাই দূরে- যা আমাকে সবসময় ব্যথিত করে। আমাদেরকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের কোনো খারাপ বা মন্দ কাজের জন্য ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে জাহিলিয়াতের সকল চ্যালেঞ্জগুলোকে উপলব্ধি করার তাওফিক দিন। রাসূলের (সা.) অনুপম শিক্ষাগুলোকে আমরা যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে পারি, সেই তাওফিক আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের দান করেন। আমিন।
(২০০৬ সালের ৭ এপ্রিল ভারতের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ আব্দুল্লাহ কাফদরায়ী (রহ.) ইংল্যান্ডের বাটলেতে জুমার নামাজের খুতবায় একটি ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তার বক্তব্যে সমসাময়িক সময়ে মুসলমানেরা যে ভয়ঙ্কর সংকটগুলো মোকাবেলা করছে, সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন। মুসলিম পিতা-মাতার প্রতি তিনি আহবান জানান যাতে তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। তিনি সমবেত মুসল্লিদেরকে রাসূলের (সা.) অনুপম শিক্ষায় জীবন পরিচালনা করার আহবান জানান। শায়খ আব্দুল্লাহ একজন খ্যাতিমান চিন্তক, লেখক, বক্তা এবং শিক্ষাবিদ। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর দারুল উলুম তাদকেশওয়ারের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ১০ জুলাই তিনি ইন্তেকাল করেন।)
শায়খ আব্দুল্লাহ কাফদরায়ী | অনুবাদ: আলী আহমাদ মাবরুর