জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে সেখানে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী অশান্তির যে দাবানল ছড়িয়ে দিয়েছেন তার শেষ কোথায়? এর ফলে যায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্রটি কি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে? ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসান কি নতুনমাত্রায় বৈধতা পাবে? এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের সাথে ইহুদি ও তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের যেই সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে তারই বা শেষ পরিণতি কী? এমন হাজারো প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণার পটভূমিতে। বিচক্ষণ মহলের অনেকেই মনে করছেন এটাই হতে পারে মুসলমানদের ঘুরে দাঁড়াবার টার্নিং পয়েন্ট, ভেদাভেদ ভুলে এক হওয়ার মোক্ষম সুযোগ।
ইহুদি জাতির ইতিহাস
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় পয়গম্বর হযরত ইবরাহিম (আ)-এর পুত্র ছিলেন হযরত ইসহাক (আ) এবং হযরত ইসহাক (আ)-এর পুত্র ছিলেন হযরত ইয়াকুব (আ)। আর ইয়াকুব (আ)-এর বংশধরগণই বনি ইসরাইল নামে পরিচিত। ‘ইসরাইল শব্দটি এসেছে হিব্রু ভাষা থেকে যার অর্থ আল্লাহর বান্দা। নবী ইয়াকুব (আ) এর বারো পুত্রের নামে বনি-ইসরাইলের বারোটি গোষ্ঠীর জন্ম হয়, যার মধ্যে এক পুত্র ইয়াহুদার ছেলেমেয়ে যারা যুডিয়া প্রদেশের কেনানে বসবাস করতো তারা ইহুদি নামে পরিচিত।
বহু নাটকীয় ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়ে হযরত ইয়াকুব (আ)-এর এক পুত্র আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইউসুফ (আ) মিসরের শাসনকর্তা হয়ে যান এবং তিনি তার মাতা-পিতা ও অন্যান্য ভাইদের সিরিয়া থেকে মিসরে নিয়ে আসেন। তখন থেকে বনি ইসরাইল জাতি মিসরে বসবাস শুরু করে এবং পরবর্তীকালে তাদের বংশ সমস্ত মিসরে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই বনি ইসরাইল জাতির জন্মের পরে একে একে কেটে যায় চারশো বছর। মিসরের শাসনক্ষমতা ইসরাইলিদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় ফেরাউন উপাধিধারী এক জালিম শাসকগোষ্ঠী। এই শাসকরা বনি ইসরাইল জাতির ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালাতে থাকে। শাসকগোষ্ঠী পুত্রসন্তানদের হত্যা করতো যাতে কখনোই এই জাতি আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে।
ইহুদির প্রতি আল্লাহর করুণা
কিন্তু মহান আল্লাহ বার বার বনি ইসরাইল জাতির ওপর সীমাহীন করুণা করেছেন। তিনি তাদেরকে ফেরাউনের দুঃশাসন থেকে মুক্তি দেন। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৪৭ থেকে ৫০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: “হে বনি ইসরাইল! আমার সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের দান করেছিলাম এবং এ কথাটিও যে, আমি দুনিয়ার সকল জাতির ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। আর তোমরা সেই দিনকে ভয় করো যেদিন কেউ কারো সামান্য উপকারেও আসবে না, কারো পক্ষ থেকে সুপারিশ কবুল করা হবে না, বিনিময় নিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে পারবে না। স্মরণ করো, সেই সময়ের কথা যখন আমি ফেরাউনিদের দাসত্ব থেকে তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলাম। তারা তোমাদের কঠিন শাস্তিতে জর্জরিত করে রেখেছিলো, তোমাদের পুত্রসন্তানদের জবেহ করতো এবং তোমাদের কন্যাসন্তানদের জীবিত রেখে দিতো। এ অবস্থায় তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বড়োই কঠিন পরীক্ষা ছিলো। স্মরণ করো, সেই সময়ের কথা যখন আমি সাগর চিরে তোমাদের জন্য রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলাম, তারপর তার মধ্য দিয়ে তোমাদের নির্বিঘ্নে পার করে দিয়েছিলাম, আবার সেখানেই তোমাদের চোখের সামনে ফেরাউনদেরকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।”
অদ্ভুত চরিত্রের জাতি
এক অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী এই ইহুদি জাতির লোকগুলো। জন্মলগ্ন থেকেই এই জাতির অধিকাংশ লোকের চরিত্রে অকৃতজ্ঞতা ও শঠতার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায় যা আজও অব্যাহত রয়েছে। হযরত ইয়াকুব (আ) থেকে হযরত মুসা (আ) পর্যন্ত প্রায় চার থেকে সাড়ে চারশো বছরে এই জাতির হাতে বহু অনিষ্ট সাধিত হয়। তা সত্ত্বেও তাদের ওপর মহান আল্লাহর করুণা ছিল অপরিসীম। এমনকি মুসা নবীর সময়ে একটানা চল্লিশ বছর পর্যন্ত এই জাতির লোকদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মান্না ও সালওয়া নামক এক প্রকার অলৌকিক খাবার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু মাত্র চল্লিশ দিনের জন্য হযরত মুসা তাদেরকে রেখে আল্লাহর ডাকে তুর পাহাড়ে অবস্থানের সময় তারা শিরকে লিপ্ত হয় এবং বাছুর পূজা শুরু করে। শুধু তাই নয়, বনি ইসরাইলের ৭০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ) কে কিতাব ও ফুরকান দান করলে প্রতিনিধিদলের মধ্য থেকে কতিপয় দুষ্ট প্রকৃতির লোক বলা শুরু করে যে মহান আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলেছেন, শুধুমাত্র আপনার কথায় আমরা কেমন করে তা মানতে পারি? অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই তাদের সামনে আল্লাহ ফেরাউনদের ডুবিয়ে মেরেছেন, অলৌকিক ক্ষমতাবলে নদীর পানি দুদিকে সরিয়ে তাদের জন্য রাস্তা করেছেন। মুহূর্তের মধ্যেই জলজ্যান্ত নজিরগুলো তারা যেন বেমালুম ভুলে গেল।
শুরু থেকেই ইহুদি জাতির চরিত্রের এই ভয়ানক রূপটি পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। শুধু কুরআন শরীফই নয় খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেলেও ইহুদিদের অপকর্মের বহু ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
সত্য ভাষণের অপরাধে হযরত ‘মিকাইয়াহ’ নামে আর একজন নবীকেও এই ইসরাইলি শাসক আখিআব কারারুদ্ধ করে। সে হুকুম দেয় এই ব্যক্তিকে বিপদের খাদ্য খাওয়াও এবং বিপদের পানি পান করাও। (১ রাজাবলী, ২২ অধ্যায়, ২৬-২৭ শোক) আবার যখন ইহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তিপূজা ও জেনা-ব্যভিচার চলতে থাকে এবং হযরত জাকারিয়া (আ) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন তখন ইহুদি রাজা ইউআস-এর নির্দেশে তাঁকে মূল হায়কেল সুলায়মানিতে ‘মাকদিস’ (পবিত্র স্থান) ও ‘যবেহ ক্ষেত্র’-এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয় (২ বংশাবলী, ২৪ অধ্যায়, ২১ শোক)।
হযরত ইয়াহইয়া (John the Baptist) (আ) যখন ইহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত জেনা-ব্যভিচার ও নৈতিকতাবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তখন প্রথমে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির এই সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে। কর্তিত মস্তক একটি থালায় করে নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয়। (মার্ক, ৬ অধ্যায়, ১৭-১৯ শোক)
হযরত ঈসা (আ) -এর বিরুদ্ধে বনি ইসরাইলের (ইহুদি) আলেমসমাজ ও জাতির নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয়। কারণ তিনি তাদের পাপকাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন, তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহবান জানাতেন। এসব অপরাধে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়। রোমান আদালত তাকে প্রাণদণ্ড দানের সিদ্ধান্ত নেয়। রোমান শাসক পিলাতিস যখন ইহুদিদের বললো, আজ ঈদের দিন, আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাব্বা (Barabbas) ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই। আমি কাকে মুক্তি দেবো? ইহুদিরা সমস্বরে বললো, আপনি বারাব্বাকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন। (মথি, ২৭ অধ্যায়, ২০-২৬ শোক)
যায়নবাদী ইসরাইলিদের ইতিহাস এমন হাজারো অপরাধ ও শঠতাপূর্ণ কর্মকান্ডে ভরপুর। জন্মলগ্ন থেকেই আল্লাহর বিধি-নিষেধের প্রকাশ্য বিরোধিতা করা ইহুদি শাসক ও নেতাদের স্বভাবে পরিণত হয়। এদের আলেমগণ ক্ষমতাসীনদের মর্জিমাফিক ধর্মগ্রন্থের অপব্যাখ্যা করে শাসকদের সকল অপকর্মের সমর্থন জোগাতে থাকে। নানাবিধ জঘন্য অপরাধে ভরপুর ইহুদি সমাজ।
ইহুদিদের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ তালমুদের নিজেদের ছাড়া বাকি সব ধর্মাবলম্বী মানুষদের ব্যাপারে ব্যাপক বিষোদগার করা হয়েছে। যদিও ধর্মগ্রন্থের নামে এখানে ইহুদিরা নিজেদের মনগড়া অনেক কিছু সংযোজন করেছে। নিজেদের কুমতলবকে চরিতার্থ করার জন্য ধর্মগ্রন্থের নামে নতুন নতুন সন্ত্রাসী বক্তব্য প্রদান এই জাতির খাসলতে পরিণত হয়েছে। তালমুদের ঘোষণাবলীর খানিকটা এখানে তুলে ধরা হলো:
“অন-ইহুদি মানুষের ধন-সম্পদের কোন মালিকানা নেই। ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক ইহুদি জাতি। অন-ইহুদিদের অর্জিত ধন-সম্পদ ন্যায়তই ইহুদিগণ দখল করে নিতে পারে। অন-ইহুদি মানুষ ও তাদের ধন-সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্যই খোদা তায়ালা ইহুদি জাতিকে দুনিয়াতে মনোনীত করেছেন। মানুষ যেমন সৃষ্ট জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তেমনি ইহুদি জাতিও মাটির পৃথিবীতে বসবাসকারী সমগ্র মানবগোষ্ঠীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কারণ ইহুদি ছাড়া সকল মানুষের মধ্যেই পশুত্ব ও পাপ-প্রবৃত্তি রয়েছে।” (ইহুদি চক্রান্ত : বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের ঐতিহাসিক দলিল, সম্পাদনায়- আব্দুল খালেক, পৃষ্ঠা- ২০)
অব্যাহত ষড়যন্ত্র
ষড়যন্ত্রপ্রিয় ইহুদিরা একইভাবে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর জামানায় এসেও তাদের চক্রান্তে এতটুকু ছেদ পড়েনি। ইহুদিরা তাদের ধর্মগ্রন্থের বর্ণনার আলোকে নবী মুহাম্মদ (সা) কে খুব ভালোভাবেই চিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু এরপরও শুধুমাত্র তাদের বংশ থেকে এই নবীর আগমন ঘটেনি বলে ইহুদিরা শেষনবীকে মেনে নেয়নি। পদে পদে দুশমনি করেছে নবী মুহাম্মদ (সা) -কে খতম ও ইসলাম ধর্মকে বিনাশ করতে।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক প্রয়াত নঈম সিদ্দিকী তার বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা গ্রন্থ “মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা)” তে একটি মজার ঘটনার উল্লেখ করেছেন যা ইহুদিদের শঠতার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। ঘটনাটি হলো: “(রাসূলুল্লাহর স্ত্রী) উম্মুল মুমিনীন হযরত সফিয়া বিনতে হুয়াই বিন আখতাব বর্ণনা করেন, আমি আমার বাবা (ইহুদি সরদার হুয়াই) ও চাচার কাছে অন্য সব সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় ছিলাম। তারা উভয়ে সব সময় আমাকে সাথে সাথে রাখতেন। রাসূল (সা) যখন মদিনায় এসে কোবায় অবস্থান করতে লাগলেন, তখন আমার বাবা হুয়াই বিন আখতাব ও চাচা আবু ইয়াসার বিন আখতাব খুব ভোরে তার সাথে দেখা করতে গেলেন। সূর্যাস্তের সময় ফিরে এলেন। মনে হলো তারা খুবই ক্লান্ত ও অবসন্ন। তারা খুব ধীরগতিতে চলছিলেন। আমি অভ্যাস মত মুচকি হেসে তাদের সামনে গেলাম। কিন্তু ক্লান্তির কারণে তারা আমার দিকে ভ্রুক্ষেপই করলো না। আমার চাচা আবু ইয়াসার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি হে, ইনিই কি সেই (প্রতিশ্রুত নবী) ব্যক্তি?’ বাবা বললেন, ‘হ্যাঁ, খোদার কসম।’ চাচা আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখন তার সম্পর্কে তোমার মনোভাব কী?’ বাবা বললেন, ‘শুধুই শত্রুতা। যতদিন বেঁচে আছি, খোদার কসম, শত্রুতাই করে যাবো।’ (পৃষ্ঠা -২১৪)
বদরের যুদ্ধক্ষেত্রে ইসলাম ও কুফরের সশস্ত্র সম্মুখ সমরে মুসলমানদের পরাজয়ই ছিল ইহুদিদের কাম্য। এরাই মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা) -এর শাহাদাতের মিথ্যা খবর রটিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সত্য প্রকাশ হয়ে যাবার পর এরা নিরাশ হয়েছিল। ইহুদিবাদী বনি নজির গোত্রের সরদার কা’ব বিন আশরাফ মুসলমানদের বিজয়ের সংবাদ বরদাশত করতে না পেরে মক্কায় চলে যায় এবং পুনরায় মদিনা আক্রমণের জন্য কুরাইশদের উসকানি দিতে থাকে। অথচ রাসূলে করীম (সা) মদিনায় আসার পর পরই ইহুদিদের সাথে চুক্তি হয়েছিল যে ইহুদিগণ নাগরিক অধিকারসহ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে এবং বাইরের দুশমন দ্বারা মদিনা আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষার জন্য পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করবে। শুধু তাই নয়, ওহুদের যুদ্ধের সময় চুক্তিপত্রের শর্ত মুতাবিক মদিনার প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ অস্বীকার করে ইহুদিরা।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, একদা একটি খুন সংক্রান্ত ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন ইহুদিদের অপর গোত্র বনি নাজিরদের মহল্লায় গমন করেন। চক্রান্তশীল ইহুদিগণ একটি উঁচু পাহাড় থেকে বড় আকারের একটি পাথর গড়িয়ে দিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। মুহাম্মদ (সা) -এর জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে নবী জীবনের একটি বড় অংশই তাকে ইহুদিদের চক্রান্ত মোকাবেলায় ব্যয় করতে হয়েছে।
রাসূলের ইন্তেকালের পরও ইহুদিদের চক্রান্ত চলতে থাকে অবিরাম গতিতে। ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে লাহোর থেকে উর্দুতে প্রকাশিত “ডাইজেস্ট” পত্রিকায় “বিভিন্ন আন্দোলনের বেশে ইহুদি” শীর্ষক এক প্রবন্ধ ছাপা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা)-এর খিলাফতের সময় যে হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়েছিল তাও ছিল ইহুদি চক্রান্তেরই একটি অংশ। আবদুল্লাহ ইবনে সাবাই নামে যে ব্যক্তিটি এ হাঙ্গামা শুরু করেছিল সে ইয়েমেনের অন্তর্গত ‘সানা’ শহরের অধিবাসী জনৈক ইহুদি। এ ব্যক্তি ইসলামী সমাজের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই মুসলমান হয়েছিল। অত্যন্ত চালাক, দূরদর্শী ও ধূর্ত ছিল সে।
কখনই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করেনি যায়নবাদী ইহুদি চক্র। সবসময়ই নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে তারা তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চেয়েছে। বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে প্রায় প্রত্যেক যুগের শান্তিপ্রিয় মানুষই ইহদিদের দ্বারা নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। পঞ্চাশের দশকে ফিলিস্তিনে অবৈধভাবে নিজেদের ভিত গড়তে গিয়েও ভয়াবহ কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল ইহুদিরা। শুধু মুসলমানদের লেখনীতেই নয়, ইহুদির চরিত্রের নানা দিক উঠে এসেছে জার্মানির সাবেক শাসক অ্যাডলফ হিটলারের লেখাতেও।
হিটলারের চোখে ইহুদি
হিটলার তার বিখ্যাত ‘মাইন ক্যাম্পফ’ (Mein Kampf) বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লিখেছেন, To outward appearances it seemed as if only one group of Jews championed this movement, while the great majority disapproved of it, or even repudiated it. But an investigation of the situation showed that those outward appearances were purposely misleading…” অর্থাৎ “বাইরে থেকে দেখলে হঠাৎ মনে হবে যে, ইহুদিদের একটি দলই বোধ হয় এই সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে চলছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ ইহুদিই এর বিপক্ষে বা একে বর্জন করেছে। কিন্তু বিশদ পর্যবেক্ষণের পর বুঝতে পারি যে এই আচরণ সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য।”
বইয়ের “Years of Study and Sufferings in Vienna অর্থাৎ “অধ্যয়ন ও ভিয়েনায় যন্ত্রণাময় বছরগুলো”-এই অধ্যায়ে হিটলার আরো লিখেছেন : “Thus there was no real rift in their internal solidarity. This fictitious conflict between the Zionists and the Liberal Jews soon disgusted me; for it was false through and through and in direct contradiction to the moral dignity and immaculate character on which that race had always prided itself.
অর্থাৎ “তাদের অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ায় নিজেদের মধ্যে কোনই দ্বন্দ্ব ছিল না। উদার ইহুদি এবং জিয়োনিস্টদের মধ্যে বাইরে-বাইরে লোক দেখানো ঝগড়া আমাকে বিরক্ত করে তুলছিল। কারণ এই ধরনের মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজি মনমানসিকতা শুধু নৈতিক মনোবৃত্তিগুলোকেই নিচু করে না, একটি জাতির চরিত্রে কালিমা লেপন করে।”
ইহুদিরা সব সময়ই মানুষকে বোকা বানানোর মধ্য নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। তারা নিজেদের মধ্যে লোক দেখানো ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টির মাধ্যমেও মানুষকে একটি ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে ঠিকই কোন না কোন উপায়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করে। বিষয়টি হিটলার খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। আর সে কারণেই তিনি ইহুদিদের প্রতি এতটাই বিরক্ত ছিলেন যে লাখ লাখ ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন।
ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
এবার ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ জন্মের দিকে একটু নজর দেয়া যাক। ফিলিস্তিনে নিজেদের অবৈধ রাষ্ট্র কায়েমের উদ্দেশ্যে জন্মেরও অর্ধশতাব্দী বছর আগে থেকেই কিভাবে যায়নবাদী ইহুদি চক্র একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে তার খানিকটা উঠে এসেছে “ইহুদি চক্রান্ত : বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের ঐতিহাসিক দলিল” গ্রন্থে। বইয়ের “বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রের ইতিকথা” -অধ্যায়ের খানিকটা তুলে ধরছি :
“অস্ট্রিয়ায় ইহুদি সাংবাদিক থিউডর হার্টজেল সর্বপ্রথম ইহুদিদের মধ্যে আযাদীর প্রেরণা সৃষ্টি করে। এজন্য তাকে ইহুদিবাদের জনক বলা হয়। হার্টজেল তার উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য একদিকে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের শাসকগণের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেয় এবং অপরদিকে তুর্কির সুলতান আবদুল হামিদ (দ্বিতীয়) -এর সাথে দেখা করে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসবাসের প্রার্থনা করে। স্বভাবসুলভ পন্থায় ইহুদি দল সুলতানকে ৫ কোটি পাউন্ড অর্থ সাহায্য পেশ করে তুর্কি খিলাফতের অর্থনৈতিক সঙ্কট দূরীকরণের ইচ্ছা প্রকাশ করে। সুলতান আবদুল হামিদ এদের অসদুদ্দেশ্য বুঝতে পেরেই ইহুদিদের আবেদন নাকচ করে দেন এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় ইহুদি সম্প্রদায় কখনও ফিলিস্তিনে বসবাস করার অনুমতি লাভ করতে পারবে না।
থিউডর হার্টজেল সুলতান আবদুল হামিদের নিকট থেকে নিরাশ হয়ে পুনরায় ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ১৮৯৭ সালের ২৯ আগস্ট সুইজারল্যান্ডে ইহুদি কংগ্রেসের বৈঠক আহবান করে। উক্ত বৈঠকে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা-তদবির জারি রাখাসহ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ইহুদি সম্প্রদায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্তের জাল বিস্তার করে।
একদিকে আরব ও অনারবদের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির মাধ্যমে তুর্কি খিলাফতের অধীনে যেসব আরব অফিসার ও সৈন্য নিয়োজিত ছিল তাদের মনে তুর্কির সুলতানের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করার কাজ ইংরেজ ও ইহুদি সম্প্রদায় যুক্তভাবে শুরু করে। আঞ্চলিকতাবাদ ও ভাষাগত জাতীয়তার সস্তা ও মুখরোচক স্লোগানে মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে তাদের দুর্বল করার এ হীন প্রচেষ্টা নব্য সমাজকে সহজে আকৃষ্ট করে এবং এর ফলে আরব তুর্কির সম্পর্ক বিনষ্ট হয় (যা আজও অব্যাহত রয়েছে)। অপরকে, (ইহুদিবাদসৃষ্ট) ‘ফ্রি ম্যাসন’ আন্দোলন তুর্কির অভ্যন্তরে যুবক শ্রেণীকে খিলাফত ও ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজে লিপ্ত হয়। তুর্কির বিপ্লব প্রধানত ইহুদিদেরই পরিকল্পনা মোতাবেক সংঘটিত হয়েছিল। কামাল পাশা ইহুদিদেরই ক্রীড়নক হিসেবে ময়দানে কাজ করেছেন মাত্র। কামাল পাশা ২৫,০০০ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। খ্যাতনামা আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের পৈশাচিক আনন্দে হত্যা করে কামাল পাশা ‘গাজী’ উপাধি ধারণ করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর লক্ষ লক্ষ যুদ্ধবিধ্বস্ত গৃহহীন লোকদের পুনর্বাসনের সমস্যা দেখা দেয়। এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ইহুদিও ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিঃ ট্রুম্যান তার সমসাময়িক ব্রিটিশ উজিরে আজম মি. এটলির সঙ্গে পত্রালাপ করে ফিলিস্তিনে এক লক্ষ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইহুদির বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। মি. এটলি এ বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য মার্কিন ও ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের একটি যুক্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। মি. ট্রুম্যান এ প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
(কমিটির) রিপোর্টে ফিলিস্তিনে এক লাখ ইহুদির বসবাসের ব্যবস্থা করার স্বপক্ষে মত প্রকাশ করা হয়। তবে কমিটির সুপারিশে স্পষ্টভাষায় একথাও উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ফিলিস্তিনে ইহুদি ও মুসলমান কেউ কারো উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারবে না। বরং ইহুদি, মুসলমান ও খ্রিষ্টান এ তিন জাতিরই ফিলিস্তিনে সমান অধিকার থাকবে। (অথচ) কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় বিপুল সংখ্যক ইহুদির বসবাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান আমেরিকায় ইহুদিদের স্থান দিতে এক সময় রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু ইহুদি সম্প্রদায় এসব প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এরা ব্রিটেনের ওসিগিরির সুযোগে সমগ্র আরব জাহানের প্রতিবাদ সত্ত্বেও দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের ফিলিস্তিনে আনয়নের অভিযান আরও জোরদার করে দেয় এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই ছয় লাখ ইহুদিকে ফিলিস্তিনে এনে বসানো হয়।
এবার ইহুদি সম্প্রদায় ফিলিস্তিনে মজবুত হয়ে বসার ব্যবস্থা করে। ব্রিটিশের ছত্রছায়ায় ফিলিস্তিনে ‘হেগনা’ ও ‘ইরগুন’ নামে দু’টি সন্ত্রাসবাদী সশস্ত্র ইহুদি সংগঠন কায়েম হয় এবং এরা মুসলমানদের উপর নির্বিচারে জুলুম নির্যাতন শুরু করে দেয়। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন হয়। তুমুল বিতর্কের পর ভোট গ্রহণ করা হয় এবং ২৯-১৩ ভোটে ফিলিস্তিন বিভক্তির প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। রাশিয়া ও আমেরিকা উভয়ই বিভাগের পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোটে প্রস্তাবটি উত্তীর্ণ না হলে তা কার্যকর হয় না বিধায় ১৯৪৭ সালের ২৬ নভেম্বর সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি সম্পর্কে বিবেচনা করা হবে বলে স্থির করা হয়। ঐ তারিখ পর্যন্ত অবস্থা ইহুদিদের অনুকূলে ছিল না। তাই বৃহৎ শক্তিগুলো নানা প্রকার টালবাহানা করে ভোট গ্রহণে বিলম্ব করতে থাকে। অপরদিকে, ইহুদি নেতাগণ পৃথক পৃথকভাবে জাতিসংঘের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে অবস্থা অনুকূলে আনয়নের জন্য প্রবল চেষ্টা শুরু করে দেয়। আমেরিকাও ঐ সময় ইহুদিদের অনুকূলে ভোটদানের জন্য সদস্য দেশগুলোকে চাপ দিতে থাকে। ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ইহুদিদের অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায় এবং ঐদিনই ৩৩-১৩ ভোটে ফিলিস্তিন বিভাগের প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ এ প্রস্তাব গ্রহণের পর মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ১৭ হাজার মুসলমান নিহত হয়।
১৪ মে (১৯৪৮) রাত ১২টায় ফিলিস্তিনে ব্রিটেনের ওসিগিরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ওয়াশিংটনের সময় মুতাবেক তখন সকাল ৬টা। এক মিনিট পরেই ইহুদি নেতা বেন গুরিয়ান স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে এবং এর মাত্র ১০ মিনিট পর ওয়াশিংটন সময় সকাল ৬টা ১১ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান করে। এদিকে শান্তি ও ন্যায়-নীতির অপর দাবিদার রাশিয়া আমেরিকার পরপরই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান করে। এভাবে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার জোর গলার দাবিদার দু’টি দেশ আরব মুসলমানদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসরাইল রাষ্ট্রকে মুসলিম জাহানের বুকে বিষাক্ত ছুরির মতই বসিয়ে দেয়।” (পৃষ্ঠা- ২৫-৩১)
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন
স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তিনের বুকে এক বিতর্কিত পন্থায় প্রতিষ্ঠা লাভ করা সত্ত্বেও ইসরাইলের ইহুদিদের মধ্যে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের প্রতি কৃতজ্ঞাবোধ থাকার কথা। কিন্তু দাঙ্গা ও হাঙ্গামাকারী ইহুদিরা তাদের স্বভাবসুলভ আচরণ এতটুকুও পাল্টায়নি। সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিনে হত্যা, ধর্ষণ ও নানাবিধ মানবতাবিরোধী অপরাধ করে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি সেনারা। তারা হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি মুসলিমকে হত্যা করেছে, বোমা মেরে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করেছে এবং আগ্রাসন চালিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে মারাত্মকভাবে জখম করেছে যাদের অনেকেই এখন পঙ্গু। উদাহরণস্বরূপ ২০১৫ সালের ২৭ শে মার্চ লন্ডনের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনের দিকে একটি নজর দেয়া যাক। “Israel killed more Palestinians in 2014 than in any other year since ” অর্থাৎ “১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরাইল ২০১৪ সালেই সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে” এই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় :
Israel’s activities in the Gaza Strip, West Bank and East Jerusalem resulted in the deaths of 2,314 Palestinians and 17,125 injuries, compared with 39 deaths and 3,964 injuries in 2013, according to the annual report by the UN Office for the Co-ordination of Humanitarian Affairs (OCHA). … About 500,000 Palestinians were internally displaced at the height of the conflict.. অর্থাৎ “গাজা উপত্যকা, পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের (হামলা) ফলে (২০১৪ সালে) ২,৩১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৭,১২৫ জন আহত হয়েছেন। ২০১৩ সালে এই নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৯ এবং আহতের সংখ্যা ছিল ৩,৯৬৪। জাতিসংঘের মানবাধিকার সহায়তা বিষয়ক অফিসের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। (২০১৪ সালের ওই আগ্রাসনে) প্রায় ৫ লাখ ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরে বাধ্য হয়েছিলেন।”
ট্রাম্পের হঠকারী সিদ্ধান্ত ও বিশ্বব্যাপী নিন্দা
ফিলিস্তিনে এভাবে যুগের পর যুগ নারকীয় তান্ডব চালাতে থাকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। আর ইসরাইলের এই আগ্রাসনকে সব সময় সমর্থন দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এতেই যেন তৃপ্ত হতে পারছে না ইহুদিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুট করে তিনি গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেন এবং তেল আবিবে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।
ট্রাম্পের এমন অবিবেচনাপ্রসূত ও আকস্মিক ঘোষণায় শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ই নয় বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষই হতবাক হন। এমনকি গত ৮ ডিসেম্বর (২০১৭) জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের (৫ স্থায়ী সদস্য ও ১০ অস্থায়ী সদস্য) নিরাপত্তা পরিষদে এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৪ সদস্য রাষ্ট্রই ট্রাম্পের জেরুজালেম নীতিকে প্রত্যাখ্যান করে। বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এদিকে, ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ বিষয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইইউ। জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে গত ১১ ডিসেম্বর (২০১৭) আলোচনায় বসেছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তকে শান্তি প্রক্রিয়ায় বিঘœ সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করেন।
অপর দিকে, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন মুসলিম দেশসমূহের সবচেয়ে বড় সংগঠন ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)। গত ১৩ ডিসেম্বর (২০১৭) তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে ৫৭-সদস্যের ওআইসির এক বিশেষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় পাল্টা পূর্ব জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মুসলিম বিশ্বের নেতারা। তারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র এবং পূর্ব জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান (Recep Tayyip Erdogan) এ সম্মেলন আহ্বান করেন। বাংলাদেশসহ ৫৭টি মুসলিম প্রধান দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রতিনিধিরা এক দিনের এ সম্মেলনে অংশ নেন।
ওআইসি সম্মেলনে মুসলিম নেতৃবৃন্দ
সভাপতির ভাষণে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ইসরাইল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ইসরাইল দিন দিনই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করছে। এটা থামাতে হবে। ইসরাইল দিন দিন যে আচরণ করছে তাকে অবশ্যই আমরা গ্রহণ করব না। যেসব দেশ আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারকে মূল্যায়ন করে তাদের উচিত জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়া।
এরদোগান আরো বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আমেরিকাসহ বিশ্ব মানবতাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। ইসরাইলকে তিনি দখলদার ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে বলেন, তেল আবিবের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে পুরস্কার দিয়েছেন। যেসব দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদের প্রশংসা করে এরদোগান বলেন, ‘ট্রাম্পের এই বেআইনি সিদ্ধান্ত একমাত্র ইসরাইল ছাড়া কেউ সমর্থন করেনি।’
সম্মেলনে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস (Mahmoud Abbas) বলেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাষ্ট্র ঘোষণা করে সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় শামিল হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “We shall not accept any role for the United States in the peace process, they have proven their full bias in favor of Israel.” অর্থাৎ “শান্তি প্রক্রিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের কোন তৎপরতাকেই আমরা আর গ্রহণ করবো না কারণ ইসরাইলের ব্যাপারে তাদের পূর্ণ পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে গেছে।”
তা ছাড়া ওআইসির (Organisation of Islamic Cooperation- OIC)মহাসচিব ইউসেফ আল-ওথাইমিন (Yousef al-Othaimeen) ওই সম্মেলনে বলেন, তারা আমেরিকার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছেন এবং এর নিন্দা জানাচ্ছেন।
আমেরিকা-ইসরাইলের গালে চপেটাঘাত
তবে, আমেরিকা ও ইসরাইল সবচেয়ে বড় চপেটাঘাত পেয়েছে গত ২১ ডিসেম্বর (২০১৭) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি নাকচ করেছে সাধারণ পরিষদ। (ট্রাম্পের) ওই স্বীকৃতি ‘অকার্যকর’ এবং তা বাতিল করা হোক-লেখা ওই প্রস্তাবের ওপর ঐদিন সাধারণ পরিষদে ভোট হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১২৮টি দেশের প্রতিনিধিরা, ভোটদানে বিরত থেকেছে ৩৫টি দেশ, আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে নয়টি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় অপমান হলো এই ভোটাভুটির মাত্র একদিন আগে অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর (২০১৭) ট্রাম্প অত্যন্ত কড়া ভাষায় ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের হুমকিতে কোন কাজ হয়নি। পরদিন ভোটাভুটিতে তার হুমকি অগ্রাহ্য করে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে রায় দিল জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য দেশ।
ইসরাইলের দম্ভোক্তি
অপরদিকে, বিশ্ববিবেককে বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসা দেশ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ভোটাভুটির অন্তত ৫ ঘণ্টা আগেই ভোটের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়ে ইসরাইলের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য জেরুজালেম পোস্ট’ শিরোনাম করে “PM calls UN ‘House of Lies,’ preemptively rejects vote on Jerusalem” অর্থাৎ “প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘকে ‘মিথ্যার বেসাতি’ আখ্যায়িত করেন, জেরুজালেমের ওপর ভোটাভুটি আগেই প্রত্যাখ্যান”। প্রতিবেদনে নেতানিয়াহুকে উদ্ধৃত করে বলা হয় :
“Jerusalem is our capital, we will continue to build it, and the embassies of countries – first that of the United States – will move to Jerusalem, he declared. This will happen.অর্থাৎ “জেরুজালেম আমাদের রাজধানী, আমরা এ ব্যাপারে কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। সব দেশ দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে যা আমেরিকাকে দিয়ে শুরু হলো। এটা ঘটবেই।”
ট্রাম্পের এই জেরুজালেম নীতি এবং ইসরাইলের অবস্থানকে প্রায় সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভয়াবহ পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ১৩ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনের উলেখ করা যেতে পারে। ওই প্রতিবেদনে ট্রাম্পের ঘোষণাকে সাঙ্ঘাতিক ভুল (Blunder) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই উদ্যোগের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ বলেও প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়, “Trump’s Jerusalem move: ‘A blunder with consequences”” অর্থাৎ “ট্রাম্পের জেরুজালেম উদ্যোগ : ‘সাঙ্ঘাতিক ভুল যার পরিণতি ভয়াবহ’”।
শেষ পরিণতি
এত কিছুর পরও শেষ কী হতে যাচ্ছে? জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি থেকে শুরু করে প্রায় সব বিশ্ব শক্তিই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তাতে যেন সামান্যতমও বিচলিত নয় ইসরাইল। প্রকৃত অর্থেই ইসরাইলের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ বিচক্ষণ মহল খুব ভালোভাবেই জানেন এসবই নাটক। যেই রাশিয়া, ব্রিটেন, জাতিসংঘ ও ইইউভুক্ত দেশসমূহ সব নীতি বিসর্জন দিয়ে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইলের অবৈধ জন্ম দিয়েছিলেন তাদের এই মায়াকান্না যে কেবলই লোক দেখানো তা সহজেই অনুমেয়।
প্রকৃত অর্থে আমেরিকা-ইসরাইল গং ও তাদের শুভাকাক্সক্ষীদের মূল ভয়টি হলো এই ইস্যুতে না জানি আবার শতধাবিভক্ত মুসলিম বিশ্ব এক হয়ে যায় কিনা। আর সেটা ঠেকাতেই এতসব নাটকের আয়োজন করা হচ্ছে। এখন অসচেতন মুসলিম বিশ্ব একটা গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে যাবে। চিন্তা করবে- দেখি জাতিসংঘ কী করে, দেখি ইইউ কী করে, দেখি সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্রাম্প -নেতানিয়াহু কতটা এগোতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অপরদিকে, আমেরিকা-ইসরাইল ছাড়া বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় থাকা বাকি দেশগুলো এই ইস্যুতে নানা ফ্রন্টে বিভক্ত হয়ে মুসলিম দেশগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর নিন্দাবাদ জানাবে। অর্থাৎ জেরুজালেম ইস্যুতে মুসলমানদের ওপর এমন চূড়ান্ত আঘাতের পরও যেন মুসলিম বিশ্ব সব মতপার্থক্য ভুলে এক প্লাটফর্মে দৃঢ় পদক্ষেপে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য এতসব সূক্ষ্ম কূটচাল।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ইমরান নযর হোসেন তার ‘পবিত্র কুরআনে জেরুজালেমের ইতিহাস : ইসলামের দৃষ্টিতে জেরুজালেমের শেষ পরিণতি” শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থে লিখেছেন, “ইসরাইল যখন পবিত্রভূমিতে মুসলিমদের উপর তার নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, আর তার ফলশ্রুতিতে যখন আরব-মুসলিম জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন টিকে থাকার প্রয়োজনে ঐ উচ্চশ্রেণীর শাসকবর্গ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্রোধের অভিনয় করতে বাধ্য হয়।” (পৃষ্ঠা-৪১)
ইমরান নযর হোসেনের গ্রন্থের আরো একটি উদ্ধৃতি এখানে খুব প্রণিধানযোগ্য বলেই মনে হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, “পবিত্রভূমির নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ব্যাপারে জেরুজালেমের নিয়তি সম্বন্ধে কুরআনিক ধারণা এই যে ইয়াসির আরাফাতের ধর্মনিরপেক্ষ পিএলও অথবা ধর্মনিরপেক্ষ ইসরাইল রাষ্ট্র কোনটিই টিকে থাকবে না। একই পথের পথিক একসাথেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে!” (পৃষ্ঠা- ২৩৪)
সব মিলিয়ে পরিশেষে এটাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হচ্ছে, দিন যতই গড়াবে জেরুজালেম ইস্যুতে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বাড়তে থাকবে এবং মুসলমানদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বর্ণচোরা মুনাফিক গোষ্ঠী যারা সর্বদাই ক্ষমতার লোভে ইসরাইল ও আমেরিকার দালালি করে বেড়ায় এবং এদের পক্ষে সাফাই গায় ও ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফতওয়াহ দিয়ে বেড়ায় তাদের প্রকৃত চরিত্র ফাঁস হয়ে যাবে। একই সাথে ভালো মানুষের মুখোশধারী বিশ্বমোড়লের ভূমিকায় থাকা দেশগুলোর ভেতরের কুৎসিত রূপটি মুসলমানদের কাছে ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর শেষমেশ এটাই হয়তো বা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের পুনরায় জেগে ওঠার টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক