“হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমাদের সামনে যখন ইসলামবিরোধী কাজ হতে দেখবে তখন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। যদি এতে অক্ষম হও তবে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে। যদি তাতে অক্ষম হও তবে অন্তর দিয়ে তাকে ঘৃণা করবে, তবে এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।” (সহীহ মুসলিম)
হাদিসের সূত্র
হাদিসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হিসেবে ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাত আল-কুশাইরী আন নিশাপুরী তার ইতিহাস বিখ্যাত সহীহ মুসলিম শরীফে গ্রহণ করেছেন। হাদিসটি মরফু ও মুত্তাসিল সনদে বর্ণিত। মুসলিম দুনিয়া যে ছয়খানা হাদিসের কিতাবকে বিশুদ্ধ বলেছে, তার মধ্যে বুখারী শরীফের পরই যে কিতাবকে বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে সফলভাবে উত্তীর্ণ তা সহীহ মুসলিম শরীফ। ইমাম মুসলিম (রহ) দীর্ঘ ১৫ বছর অবিশ্রান্ত সাধনা করে বাছাইয়ের পর বাছাই করে সরাসরি উস্তাদদের নিকট হতে শ্রুত তিন লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে তাকরারসহ বার হাজার আর তাকরার বাদে চার হাজার হাদিস এ মহান কিতাবে সন্নিবেশিত করেছেন। মুসলিম শরীফ রচনায় তিনি অত্যন্ত সতর্কতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। প্রত্যেকটি হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সমসাময়িক মুহাদ্দিসদের সাথে পরামর্শ করেন ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহীহ মুসলিম সঙ্কলন করেন। এ কিতাবের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ইমাম মুসলিম নিজেই বলেছেন- কেবল আমার বিবেচনায় সহীহ হাদিসসমূহ আমি এ কিতাবে শামিল করি নাই বরং যে সকল হাদিস এ কিতাবে সন্নিবেশিত করেছি তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে যুগের মুহাদ্দিসগণের ইজমাহ হয়েছে।
সাহেবুল হাদিস
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) নবীজির (সা) প্রসিদ্ধ সাহাবীদের একজন। তাঁর পিতা মালিক ইবনে সিনান ও মাতা আনিসা বিনতে আবিল হারিছ হিযরতের আগে ইসলামে দাখিল হন। আর হিযরতের ১০ বছর আগে আবু সাঈদ ‘খুদরী’ নামে পরিচিত ছিলেন বিধায় তার নামের সাথে সংযুক্ত হয়েছে খুদরী। রাসূল (সা) হিযরতের পর মদিনার মসজিদ নির্মাণে তিনি অংশ নেন। বয়স কম থাকায় তিনি বদর ও ওহুদ যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। পরে আহযাব, হুদায়বিয়া, খায়বর, হুনায়ন, তাবুক ও মক্কা বিজয় অভিযানসহ ১২টি গাযওয়ায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন। তিনি হযরত উমর (রা)-এর সময় মদিনার মুফতির পদে নিযুক্ত হন। তিনি সাহাবীদের যুগে অন্যতম একজন ফকীহ্ ছিলেন। তিনি হাদিস বর্ণনাকারীদর মধ্যেও একজন। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ১ হাজার ১৭০টি। তিনি সাদাসিধা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। আর সুন্নাতে রাসূলের কঠোর অনুসারী ছিলেন। ৮৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
হাদিসের ব্যাখ্যা
হাদিসখানার মূল বিষয় হলো ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ প্রসঙ্গে। এই বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার, ইসলাম ছাড়া তথা অহির সমর্থন ছাড়া যা কিছু সব অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন। মুমিনেরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু মানবে না মানতে পারে না। নবীদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানবরচিত আদর্শের ওপর আল্লাহতায়ালার নাজিলকৃত দ্বীনে হক্ক তথা ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার। হাদিসের আলোচনায় আমরা সরাসরি যেতে চাই।
“তোমরা যখন তোমাদের সামনে কোন ‘মুনকার’ অর্থাৎ ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কিছু সংঘটিত হতে দেখবে সাথে সাথে একে পরিবর্তন করার জন্য তোমাদের হাতের শক্তি প্রয়োগ করবে।” অন্যায়কে দেখার পর চুপ থাকা, কোন প্রকার অজুহাত পেশ করে তার সাথে আপস করা ঈমানের দাবি নয়। ব্যক্তিগত জীবনে যতটুকু সম্ভব ইসলামী আচরণ নিজে পালন করাকে মুসলমানেরা আজ যথেষ্ট মনে করছে। ধর্মনিরপেক্ষবাদীরাও অপরের কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা, কারো সভ্য বা অসভ্য আচরণ বা কর্তব্যকে ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা স্বাধীন মতপ্রকাশে হস্তক্ষেপ বলে এড়িয়ে যাওয়াকে আজকের গণতান্ত্রিক সভ্যতা মনে করা হচ্ছে। ইসলামের বক্তব্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলাম জীবনের প্রতিটি বিষয়ে সত্য ও অসত্য, ন্যায় ও অন্যায়, বৈধ ও অবৈধতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেছে। যা কোন মানুষের পক্ষে অথবা মানবগোষ্ঠীর পক্ষে অসম্ভব বিষয় যে তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা দিয়ে সত্য ও মিথ্যার বিধান দেবে। এ বিষয়ে আল্লামা মওদূদী (র) এর একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। ‘মানুষ তার জীবনের প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহতায়ালার হেদায়েতের মুহতাজ।’ আদম (আ)কে পৃথিবীতে প্রেরণ করে আল্লাহতায়ালা বলে দিলেন আমার পক্ষ থেকে হেদায়েতের বিধান অবতীর্ণ হবে, তুমি শুধু তাকে অনুসরণ করবে তাহলে তোমার চিন্তার কারণ থাকবে না। কুরআন বলছে-
“আমার পক্ষ হতে তোমাদের জন্য হেদায়েতের বিধান অবতীর্ণ হবে, যারা এ পথনির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের জন্য ভয়ভীতির কোনো বিষয় নেই, চিন্তারও কোনো কারণ নেই।” (সূরা বাকারা : ৩৮)
সুতরাং এ কথা নিশ্চিত যে মানুষ বা মানুষের পার্লামেন্ট মানুষের জন্য হিদায়াত বা পথনির্দেশ বা ভালো ও মন্দের বিধান রচনা করতে পারবে না। অন্তত যারা বিশ্বাসী বলে দাবি করে তাদের জন্য আল্লাহর অবতীর্ণ হেদায়েতে যা হারাম তা পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত হারাম থাকবে এ ঈমানত অপিরহার্য। সে মোতাবেক খোদার বিধানে যা অবৈধ বা হারাম তাকে পরিবর্তন করে ন্যায়ের বিধান প্রতিষ্ঠা করা সকল মুমিনের ঈমানের দাবি। আবার ইসলামের মূল আকিদা বিশ্বাস, আল্লাহ, রাসূল (সা) বা কুরআনের অসম্মান ও পবিত্রতার ওপর যে কেউ আঘাত করবে এর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ উম্মাহর বিশ্বাসের অনিবার্য দাবি। কেউ যদি তাকে কারো বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে এড়িয়ে যেতে চায় আমরা তাদেরকেও অপরাধীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করবো। হাদিসের মর্মানুসারে মুসলমানেরা হাত দিয়ে বাধা দেবে অর্থাৎ প্রয়োজনে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।
“যদি হাত দিয়ে প্রতিরোধ করতে অক্ষম হও তবে জবান দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে।”
অর্থাৎ অন্যায়কারীদের অবস্থান, তাদের শক্তি ও ক্ষমতার প্রতাপ যদি এমন হয় যে হাত দিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব নয় তবে হাদিস বলছে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে তবে হাতের জায়গায় মুখ দিয়ে। ঈমান কোন অবস্থায় আপস করে না। শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব না হলে মুমিনদেরকে প্রতিবাদ সভা, পোস্টার, লিফলেট ও পুস্তক লিখে প্রতিবাদ করতে হবে। অন্যায় ও অসত্যকে মেনে নেয়ার কোনো অজুহাত ইসলামে স্বীকৃত নয়, তবে কুরআন বলছে- সাধ্যের বাইরে কোন বিষয়ে দায়িত্ব নেই। সূরা বাকারার ২৮৬ নম্বর আয়াতে রয়েছে
“আল্লাহ কারো ওপর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দেন না।” যদি জালেমদের অবস্থান এতই শক্তিশালী হয় যে প্রতিবাদের কোনো আওয়াজ তোলা যায় না তবে সেখানে যতটুকু সম্ভব সাধ্যের মধ্যে থেকে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
“যদি জবান দিয়ে প্রতিবাদে অক্ষম তবে অন্তর দিয়ে প্রতিবাদ করবে অর্থাৎ অন্যায় ও খোদাদ্রোহিতাকে কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যাবে না। অন্তত মনে মনে তাকে ঘৃণার সাথে দেখতে হবে। সন্তুষ্টচিত্তে পাপাচারকে মেনে নেয়া কোন অবস্থায় বৈধ হতে পারে না। শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা নেই আবার প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ যদি জালেম শক্তি মেনে না নেয় তবে কিছু করতে না পারার অসহ্য কষ্ট নিয়ে অন্যায় ও অসত্যকে হৃদয় দিয়ে চুপিসারে গ্রহণ করা ইসলামে স্বীকৃত নয়। অন্তত সর্বশেষ মনের মধ্যে প্রচণ্ড ঘৃণা দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে। তবে চোখে, মুখে বিরক্তির ও নীরব প্রতিবাদের ভাষা অন্যরা লক্ষ্য করবে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত মুমিন স্বাভাবিক হতে পারে না, স্বাস্থ্যের নিঃশ্বাস ফেলতে পারে না। ব্যথায় তার অন্তরের চাপ বেড়ে যায়। নবীজি (সা) অন্তরের প্রতিবাদকে দুর্বল ঈমানের পরিচয় বলেছেন। হাত দিয়ে শক্তভাবে বাধা দেয়া আর কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ সবল ঈমানের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দেয়। মুমিনগণ তৃতীয় ও দুর্বল অবস্থায় নয় বরং ভালো অবস্থায় ঈমানের ওপর থাকার প্রচেষ্টা নিরন্তর চালাতে হবে। তৃতীয় অবস্থান হচ্ছে ঈমান অসুস্থ ও মরণের রোগে আক্রান্ত।
হাদিসের শিক্ষা
১. ঈমানের অস্তিত্ব জিহাদের মধ্যে। যেখানে জিহাদ নেই সেখানে ঈমান নেই।
২. ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি রয়েছে। আর কুরআন তিলাওয়াত ঈমানের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চার করে।
৩. ঈমান কোন অপরাধ বা অন্যায়কে মেনে নেবে না। বরং পাপাচারকে বিলুপ্ত করার জন্য সাধ্যানুসারে লড়াই করবে।
৪. ঈমানকে শক্তিশালী ও মজবুত করতে অব্যাহতভাবে চেষ্টা ও সক্রিয় থাকতে হবে।
৫. নিফাক হচ্ছে ঈমানের কঠিন রোগ, সন্দেহ ও রাইবুন থেকে ঈমানকে দূরে রাখতে হবে।
উপসংহার
যে একটি বিষয় মুসলমানদেরকে সারা দুনিয়ায় একদিন বিজয়ী করেছিল, যে বিষয়টির সাথে জান্নাত ও জাহান্নামের ফায়সালা নিহিত, মুসলিম উম্মাহর আজকের বিপর্যয় যার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত তা হচ্ছে শক্তিতে ছিল বলীয়ান। বিশ্বাস তাদের কলিজায় এইভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যেমন পাহাড় জমিনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দুনিয়ার কোন আনন্দ বা কঠিন বেদনা তাদের ঈমানের ওপর কোন আছর সৃষ্টি করেনি। ভালো-মন্দ, কল্যাণ ও অকল্যাণের একমাত্র মালিক যে আল্লাহ তায়ালা এ দৃঢ় আস্থা এতটুকু তাদের হৃদয়ে শিকড় গেড়েছিল যে, জ্বলন্ত লাল কয়লার ওপর শুইয়ে রেখে বুকের ওপর পাথর চাপা দিয়েছেÑ হযরত বিলাল সে সময় আহাদুন আহাদুন বলছিলেন। মাথার ওপর করাত রেখে ঈমান ত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাদের দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে কিন্তু তাদের থেকে ঈমানকে বের করা যায়নি। তাওহিদ ও রিসালাত মুহাম্মদীর ওপর তাদের বিশ্বাস এত কঠিন ছিল যে সারা দুনিয়ার সম্মিলিত শক্তি যেন আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘনে তাদের ওপর কোন প্রভাব রাখতে পারেনি। খোদার বিধানের সামনে দুনিয়ার চলমান সভ্যতাকে তারা জাহেলিয়াত কাদেসিয়ার মাঠে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব বিখ্যাত বীর রুস্তমের নেতৃত্বে আর মুসলিম বাহিনী কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালো অশ্বারোহী পর্যুদস্ত করে দিয়েছিল লাখ লাখ ইরানী বাহিনীকে।
রুস্তম নিহত হলে অগণিত লাশ মাঠে রেখে তারা রণে ভঙ্গ দিয়েছিল। কাদেসিয়ার বিজয়ের সংবাদ যখন মদিনায় পৌঁছল আমিরুল মুমেনিন হযরত উমর (রা) সিজদায় পড়ে এমনভাবে কাঁদতে ছিলেন যেন তাঁর কান্না থামছিল না। কাদেসিয়ার ঐতিহাসিক বিজয়ের পর সাদের বাহিনী সামনে রাওয়ানা হলো ইরানী সাম্রাজ্যের রাজধানী মাদায়েনের দিকে। তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ দজলা পার হয়ে যেতে হবে কিন্তু ইরানীরা সমস্ত পুল, সাঁকো ও কালভার্ট ধ্বংস করে দিয়েছিল মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধে, তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিল সমস্ত জলযান। দজলার পারে এসে থমকে দাঁড়ালেন মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি আশারায়ে মুবাশ্বেরার অন্যতম সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা)। তিনি আল্লাহু আকবর বলে দজলার তরঙ্গের ওপর ঝাঁপ দিলেন আর তাকে অনুসরণ করে হাজার হাজার অশ্বারোহী এইভাবে দজলার ওপর দিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে চললেন যেন তারা স্থলভাগের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন।
যে দৃশ্য চোখে দেখে ইরানীরা চিৎকার করে বলেছিল, পালাও। দরিয়ার ওপর দিয়ে রমেয় সম্পদ, সোনা, চাঁদি রেখে শ্বেতপাথর নির্মিত হোয়াইট হাউজ নামক রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ইতিহাসের কাছে এ বিজয়ের ব্যাখ্যা কী? যা ঘটেছিল প্রকাশ্য দিবালোকে আর অগণিত বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের উপস্থিতিতে। আমরা জানি ঈমানের দৃষ্টিকোণ ছাড়া বস্তুবাদী ও কুফরি চিন্তা চেতনার কাছে এর ব্যাখ্যা নেই। এর রহস্য উন্মোচন অসম্ভব, কেউ বুঝুক আর না বুঝুক তাই ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা। আজকের দুর্বল ঈমানের অধিকারী মুসলমানদেরকে সে বিশ্বাসের অপরিমেয় শক্তির নিকট ফিরে যেতে হবে। আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মুনাফিকী আর কাপুরুষতার খোলস দূরে বহু দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। পরাশক্তির ভয়াল অস্ত্র আর হুমকি মুমিনদের নিকট কাগজের বাঘ যা দেখতে ভয়ঙ্কর কিন্তু ঈমানের প্রচণ্ড আঘাতে তা চুরমার হয়ে যেতে বাধ্য। কুরআন বলছে, তোমরা জাহেলিয়াতের ওপর আঘাত কর, তাদের ঈমান দুর্বল। ঈমান কুফুরির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংঘাতে জড়িয়ে যেতে বাধ্য আর মুমিনেরা চির সংগ্রামী। একটি নির্ঝঞ্ঝাট জামেলাবিহীন, নিরিবিলি জীবন- খাও, দাও আর বংশ বিস্তার কর এই পশুর জিন্দেগি কোন মুমিন গ্রহণ করতে পারে না।
“শুধু অর্থ সম্পদ জমা করে আর গণনা করে আর ধারণা করে এ সম্পদগুলোকে অমর করে রাখবে।” (সূরা হুমাজাহ : ৩-৪)
কারুন আর ফেরাউনের জীবনকে যারা গ্রহণ করেছে তারাই শুধু সম্পদ আর প্রাচুর্যকে জীবনের লক্ষ্য বানাতে পারে। মুমিনদের সামনে সে আবু বকরের জিন্দেগি আদর্শ যিনি রাসূলের (সা) সামনে সমস্ত সহায় সম্পদ এমনকি রান্নার পাতিল পর্যন্ত হাজির করে দিয়েছিলেন তাবুকের যুদ্ধে। ‘পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ’ রাসূলের (সা) এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। সুবহান আল্লাহ! পৃথিবী কি আর একটি আবু বকর কোন দিন খুঁজে পাবে? আজকের সমাজের দায়িত্বশীল, কর্তাব্যক্তি ও অপরিমেয় সম্পদ ও প্রাচুর্যের মালিক হয়েও ব্যস্ত রয়েছে যারা লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হত্যা, গুম ও খুন এর ন্যায় ভয়াল অপকর্মে। এদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জেদ, সম্পদের পর্বত, সৃষ্টির লিপ্সা ও দুর্নীতির ভয়াল থাবায় কোটি কোটি মানুষ নির্যাতিত মজলুম। কোন মুমিনের ঈমান যদি দুর্বল ও নিঃশেষ হয়ে না যায় তবে জালেম, শোষক, দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শুরু করতে হবে ক্ষমাহীন লড়াই। কুরআন বলছে-
“তোমরা শয়তানের চেলাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হও। শয়তানদের যাবতীয় চক্রান্ত দুর্বল।” (সূরা নিসা : ৭৬)
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ