আপন অবস্থান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলেই মানুষ সঠিক কাজটি করতে পারে। তা না হলে বে-ঠিক কাজ করে করেই মানুষ তার পৃথিবীর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়।
আমি কোত্থেকে এলাম, কোথায় এলাম, কেন এলাম এবং যাচ্ছি কোথায়? – এইগুলো মানুষের মনে দেদীপ্যমান বড় বড় জিজ্ঞাসা। মানুষ নিজের চিন্তা শক্তিকে ব্যবহার করে এই প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক জবাব পাওয়ার চেষ্টা করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এইভাবে মানুষ সদুত্তর লাভ করে ধন্য হতে পারেনি। বরং মানুষ উত্তরোত্তর চিন্তার জটিল থেকে জটিলতর আবর্তে পড়ে নাকানি চুবানি খেয়েছে।
মানুষই নাস্তিকতাবাদ, অংশীবাদ, সর্বেশ্বরবাদ, বৈরাগ্যবাদ ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে। রচনা করেছে বহুসংখ্যক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মতবাদ। এইগুলোর কোনটিই চিন্তাশীল মানুষের মনে নিত্য-ঘূর্ণায়মান মৌলিক প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব নয়।
আসলে এইসব জিজ্ঞাসার জওয়াব দেওয়ার যোগ্যতা মানুষের আদৌ নেই। সেই জন্য মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন নিজেই এইসব প্রশ্নের জওয়াব মানুষকে দান করেছেন তাঁর বাছাইকৃত ব্যক্তিদের মাধ্যমে অর্থাৎ নবী-রাসূলদের মাধ্যমে।
আর নবী-রাসূলদের সর্বশেষ ব্যক্তিত্ব ছিলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
স্রষ্টা, সৃষ্টি, পৃথিবীতে মানুষের কর্তব্য এবং মানুষের শেষ ঠিকানা সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান বিতরণের কাজ করছিলেন তিনি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু আত্মম্ভরী ও স্বেচ্ছাচারী মানুষরা তাঁর এই শান্তিপূর্ণ প্রয়াসকেও বরদাশত করতে পারেনি।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চারিত নির্ভুল-সঠিক বক্তব্য সত্য-সন্ধ্যানী মানুষগুলোর চোখ খুলে দিতে থাকে। এতে ইসলাম বিদ্বেষী প্রভাবশালী মহল শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা নানা ধরনের অসত্য কথা রটনা করে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর প্রচারিত দীন সম্পর্কে জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে থাকে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারা কবি, গণক, যাদুকর, পাগল ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করতে থাকে। এক সময় এই অপপ্রচার ঝড়ের আকার ধারণ করে।
এই অপপ্রচারের মোকাবিলায় আমরা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রধানত তিনটি কাজ করতে দেখি।
এক. তিনি সহজ-সরল ভাষায় ইসলাম বিদ্বেষীদের বানোয়াট কথাগুলোর প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাদের সাথে কূট তর্কে জড়িয়ে পড়েননি।
দুই. তিনি ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচারে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে থাকেন।
তিন. পরিস্থিতির প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মানুষের কাছে পৌঁছে তাদেরকে ইসলামের জীবন দর্শন ও জীবন বিধান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন।
যুগে যুগে যারাই ইসলামের প্রতিষ্ঠাকল্পে সংগ্রাম করেছেন, তাঁদেরকে অবধারিতভাবে ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
এই যুগেও যাঁরা জীবনের সকল দিক ও বিভাগে ইসলামের বিধিবিধান কার্যকর করতে চেষ্টিত হবেন, তাঁদেরকেও ইসলাম বিদ্বেষীদের পক্ষ থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালানো হবে। কল্প-কাহিনী রটনা করে তাঁদের সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হবে।
যাঁরা এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন তাঁদের কর্তব্য হবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্মনীতির দিকে দৃষ্টি ফেরানো।
অসত্য প্রচারণার মোকাবিলায় তাঁদের কর্তব্য হবে পুন:পুন: সত্য কথাটি উচ্চারণ করতে থাকা। বিরোধিতার মোকাবিলায় সত্য-সঠিক পথের ওপর দৃঢ়পদ থাকা।
আর পরিস্থিতির প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, সৌন্দর্য ও কল্যাণময়তা সম্পর্কে আম-জনতাকে সচেতন করে তোলার নিরলস প্রয়াস চালানো।
লেখক :ইসলামী চিন্তাবিদ, নায়েবে আমীর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী