ইসলামি অর্থনীতি ও ঈমান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এটি ইসলামি অর্থনীতির সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ইসলামি অর্থনীতি থেকে যদি এ বৈশিষ্ট্যকে তুলে নেয়া হয় তাহলে সেটি মুখ থুবড়ে পড়বে। সফলতার আলো দেখতে পাবে না কখনো। ঈমান বলতে আমরা এখানে সে ঈমানকেই উদ্দেশ্য করছি, কুরআন সুন্নাতে যা আকিদা শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ এটি ঈমানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি নির্দেশ করে। আর তা হচ্ছে আমান তথা নিরাপত্তা ও শান্তি। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্যেই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়েতপ্রাপ্ত।
দেখা যাচ্ছে ঈমান শব্দটি শান্তি ও নিরাপত্তার এ মহান অর্থ ও উদ্দেশ্যকে ধারণ করে আছে। তাই এখানে আকিদা শব্দের পরিবর্তে ঈমান শব্দটির ব্যবহারই সংগতিপূর্ণ ও অধিক যুক্তিযুক্ত। সুতরাং ঈমান একটি সহজবোধ্য বিষয় যার শব্দগুলোও খুব সাবলীল। মন ও মননকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে দারুণভাবে। অনুরূপভাবে এটি আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারের প্রতিও নির্দেশনা প্রদান করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ ঈমান দ্বারা এমন সমর্থন ও স্বীকৃতি কামনা করেন যার পশ্চাতে থাকবে আনুগত্য ও মান্যতা। আর ঈমান শব্দটি মৌলিকভাবে উল্লেখিত অর্থ বুঝিয়ে থাকে। অর্থাৎ ঈমানের অর্থ শুধুমাত্র সমর্থন ও স্বীকৃতিই নয় বরং আনুগত্য সংবলিত স্বীকৃতি। মানসপটে একটি জিজ্ঞাসা উঁকি দিচ্ছে যে, অর্থনীতির সাথে ঈমানের সম্পর্ক কি? তার সাথে এর যোগসূত্রই বা কি? কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটিতে আমরা এর সমাধান খোঁজে পাব। এরশাদ হচ্ছে, আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।
হালাল উপার্জন ছাড়া কোনো ইবাদাত কবুল হয় না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, হারাম সম্পদে গঠিত কোনো দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। উক্ত হাদিসটি থেকে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি যে, অর্থনীতিকে ইসলামী শরীয়াহ এর আদলে ঢেলে সাজানো ঠিক কতটা জরুরি। আর ইসলামী ব্যাংকিং ইসলামী অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং ইসলামী অর্থনীতি ইসলামী জীবনব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ ইসলামী শরীয়াহ প্রধানত দুটি শাখা রয়েছে
ইবাদত ও মুআমালাত (লেনদেন ও আচার-আচরণ)। আর রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে সাধারণত ২ ঘণ্টা সময় আল্লাহ্ তাআলা আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেনে। বাকী ২২ ঘণ্টা সময় মুআমালাত-এর মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষকে অতিবাহিত করতে হয়। আর মুআমালাত-এর বিশাল অংশ জুড়েই রয়েছে ইসলামী অর্থব্যবস্থা। এ অর্থব্যবস্থার প্রধান সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্যাংক। সুতরাং ইসলামী ব্যাংকিংকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে ইন্শাআল্লাহ্।
এছাড়া ব্যবসায় প্রতারণা করা ইসলামে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত। মন্দ জিনিস ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া, ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদিন রাসূল (সা.) বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তিনি খাদ্যের ভিতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন ভিতরের খাদ্যগুলো ভিজা বা নিম্নমান। এ অবস্থা দেখে রাসূল (সা.) বললেন, হে খাবারের পণ্যের মালিক এটা কী? লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেটাকে খাবারের উপরে রাখলে না কেন; যাতে লোকেরা দেখতে পেত? যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম, হাদিস ৩২৯৪)