মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু ও অভিভাবক হলেন আল্লাহ তাআলা। তিনিই মানুষের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। মানুষ তাঁর দুনিয়ার প্রয়োজনে একে অপরের নিকট অনেক কিছুই চেয়ে থাকে। এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, কেউ কারো নিকট কিছু চাইলেই পাবে।
আল্লাহ তাআলাই একমাত্র সত্তা। যিনি মানুষকে না চাইতে দান করেছেন এবং করেন। মানুষ আল্লাহর কাছে না চেয়েছে জীবন; না চেয়েছে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হাত, পা, চোখ, কান, নাকসহ অন্যান্য অঙ্গ। আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি বড় মায়া করেই এসব বিনা চাওয়াতেই দান করেন।
প্রবাদ রয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার হয়ে যায়; আল্লাহ তাআলাও তাঁর হয়ে যায়।’ আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় নিজেকে তাদের প্রকৃত অভিভাবক ও বন্ধু হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছেন। বাস্তবেও তাই। তিনি বান্দার প্রতি অনেক দয়াশীল।
কুরআনের যে সব আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজেকে বান্দার প্রকৃত অভিভাবক ও বন্দু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তা থেকে কিছু আয়াত তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোজখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৫৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা উপমা তুলে ধরে বলেন, ‘মানুষদের মধ্যে যারা ইবরাহিমের অনুসরণ করেছিল- তারা, আর এই নবি এবং যারা এ নবির প্রতি ঈমান গ্রহণ করেছে, তারা ইবরাহিমের ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৬৮)
আল্লাহ তাআলার অবাধ্যকারী তাঁর বন্ধু হতে পারে না, যারা তাঁকে ভয় করে তারাই আল্লাহ তাআলার বন্ধু। তিনি ইরশাদ করেন, ‘জালিমরা একে অপরের বন্ধু আর আল্লাহ হলেন মুত্তাকি তথা পরহেজগারদের বন্ধু। (সুরা জাসিয়াহ : আয়াত ১৯)
যারা আল্লাহ বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করে তারাও আল্লাহর বন্ধু। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনগণ; যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং (কথা ও কর্ম সম্পাদনে) বিনম্র। (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫৫)
আল্লাহর নির্দেশ পালনকারীরাই তার প্রিয়, তিনি তাদের অভিভাবক। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর এটাই আপনার পালনকর্তার সরল পথ। আমি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে আয়াতসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। তাদের জন্যেই তাদের প্রতিপালকের কাছে নিরাপত্তার গৃহ রয়েছে এবং তিনি তাদের বন্ধু তাদের কর্মের কারণে। (সুরা আনআ’ম : আয়াত ১২৬-১২৭)
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগত বান্দাদের অভিভাবক হিসেবে তাঁদের জন্য চলার গাইড স্বরুপ কুরআন; সুসংবাদ প্রদানকারী হিসেবে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাহায্য করার ঘোষণা দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘আমার সহায় তো হলেন আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। বস্তুত; তিনিই সাহায্য করেন সৎকর্মশীল বান্দাদের। (সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৯৬)
মানুষ বিপদে পড়ে নিরাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু আল্লাহ মানুষকে নিরাশ করেন না বরং নিজেকে তাদের বন্ধু ও কার্যনির্বাহী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই প্রকৃত বন্ধু তথা কার্যনির্বাহী, প্রশংসিত। (সুরা শুরা : আয়াত ২৮)
আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে সব নবি রাসুলদের প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন, যা তিনি কুরআনে তুলে ধরেছেন। যেমন অভিভাবক ছিলেন হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের। কুরআনের ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে পালনকর্তা আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতাও দান করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন তাৎপর্য সহ ব্যাখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছেন। হে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহী ইহকাল ও পরকালে। আমাকে ইসলামের উপর মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে স্বজনদের সাথে মিলিত করুন।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১০১)
পরিশেষে…
দুনিয়া ও পরকালে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলাই মানুষের প্রকৃত অভিভাবক ও বন্ধু। কুরআনের এ আয়াতে তিনি তা স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে; তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর। এটা ক্ষমাশীল করুনাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন। (সুরা হামিম সেজদাহ : আয়াত ৩০-৩২)
মুসলিম উম্মাহর উচিত, আল্লাহ তাআলাকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা। জীবনের সর্বাবস্থায় অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে কবুল করুন। আমিন।