আমাদের সমাজে দেখছি, অনেক মেয়ে চাকরিতে ঢুকলেও তাদের উপার্জনের কিছু অংশ কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ বা দ্বীনের পথে খরচ করছেন না। অথচ হজরত খাদিজা রা: কুরাইশদের মধ্যে একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। দাওয়াত ও রিসালাতের শুরু থেকেই রাসূলুল্লাহ সা:কে সাহায্য করে গেছেন। দ্বীনের পথে সব রকমের কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করেছেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলে থাকেন, রিসালাতের শুরুতে খাদিজা রা:-এর কাছে ২৫ হাজার দিরহাম ছিল, কিন্তু ৮-৯ বছরে সঞ্চয়গুলো তিনি দাওয়াতের কাজে বিলিয়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া ঈমান আনতে গিয়ে ঘর থেকে বিতাড়িত হওয়া মুসলমানদের তিনি ব্যয়ভার গ্রহণ করতেন।
এ দিকে বর্তমানে বেশির ভাগ মেয়ে তাদের উপার্জনের টাকা শুধু নিজের ওপর খরচ করছেন। না, নিজের ওপর খরচ করার বিরোধিতা করছি না। তবে একটা বিষয় আমরা ভেবে দেখতে পারি তা হলোÑ এক দিনে ৫০০ টাকাও খরচ করা যায় আবার ৫০ হাজার টাকাও খরচ করে ফেলা যায়। হাতে টাকা থাকলে প্রয়োজন চলে আসে, সেটা নিজের ওপর হোক কিংবা অন্য কাউকে খুশি করার জন্য হোক। তবে আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে পরিকল্পনা। উপার্জনের ২০ শতাংশ বা তার চেয়ে কম জনকল্যাণমূলক কাজে, যা এলাকাভিত্তিকও হতে পারে। যেমন- সরকারিভাবে লাগানো রাস্তার কলটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বা সারা দিন পানি পড়েই যাচ্ছে। এবার না হয় ব্যক্তি উদ্যোগে কলটি মেরামত করে ফেলি। অনেকে হয়তো বলবেন- ‘এটা তো সরকারের দায়িত্ব, আমরা করব কেন’? হ্যাঁ, ঠিক। তবে সরকার আসার আগে আমরা এই কাজটি করে ফেললে সরকার যে কাজটি করতে পারেনি সেই কাজটি আমরা হয়তো ভালোভাবেই করে ফেলব। এতে এলাকার লোকজন উপকৃত হবে এবং ভালো কাজে সহায়তাও করবে।
রইল দ্বীনের পথে খরচের কথা। এটাও নিজ থেকেই শুরু করা যায়। জানার শেষ নেই। আমাদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত। আমাদের সর্বপ্রথম ধর্মীয় বই পড়া উচিত, কারণ এরপর আমরা যেকোনো বিষয়ের বই পড়ি না কেন ইনশাআল্লাহ বিভ্রান্ত হবো না।
আমরা অনেক সময় বলি, ‘ছেলেরা নারীনীতি নিয়ে এত কথা কেন বলে? আমাদেরটা আমরাই বুঝি।’ হ্যাঁ, আমাদেরটা আমরা কতটুকু বুঝেছি, যা বুঝেছি সেটা সঠিক কি না, ধর্ম কী বলে, নারীনীতি কেমন হওয়া উচিত, সমাজ কোন পথে চলছে, কী শিখছি আমরা, আদৌ পরিবর্তনের দরকার আছে কি না বা সব ঠিক আছে কি নাÑ সেটা উপলব্ধি করতে হলে নিজেকে নিজেই জানাতে হবে। আর আমরা যদি না জানি সে েেত্র অন্যরা বললে তার বিরোধিতা করার মানে হয় না। সুতরাং প্রথমত, নিজেকে দ্বীনের পথে আনতে নিজের জন্য টাকা খরচ করতে হবে এবং আরেকটা হতে পারে যারা দ্বীনের পথে কাজ করে তাদের জন্য টাকা খরচ করা।
এ দিকে সমাজে আরেকটা সমস্যা দেখি, অনেক মেয়ে ভালো পথে টাকা দিতে আগ্রহী হলেও তারা জানেন না দেবেন কোথায়? কিংবা জানেন না কোন বইটি পড়া দরকার। তাই বলতে হয়, যারা জানেন (আপনি যাদের ভালো মনে করেন) তাদের জিজ্ঞেস করুন।
পরিশেষে আমরা জানি, ছেলেদের ওপর পরিবারের আর্থিক যে চাপ থাকে মেয়েরা কিন্তু সে দিকটা থেকে অনেকটাই মুক্ত। বাবা কখনো মেয়ের কাছ থেকে টাকা চাইবে না, আর স্ত্রী তার স্বামীকে টাকা দিতে বাধ্য নয়। সুতরাং সমাজ গঠনে নারীর অংশগ্রহণ ও সহায়তা কাম্য। যার জন্য মানসিকভাবে তৈরি হওয়া উচিত।
লেখক : প্রবন্ধকার