عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ، وَلَا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا رَسْمُهُ، مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرَابٌ مِنَ الْهُدَى، عُلَمَاؤُهُمْ شَرُّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ مِنْ عِنْدِهِمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيهِمْ تَعُودُ-
“হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ভবিষ্যতে মানুষের সামনে এমন একটা যুগ আসবে যখন নাম ব্যতিরেকে ইসলামের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, আল-কুরআনের আক্ষরিক তিলাওয়াত ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তাদের মসজিদ গুলো হবে বাহ্যিক দিক দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হবে হেদায়াত শূণ্য। আর তাদের আলেমগণ হবে আকাশের নিচে জমিনের উপরে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ তাদের মধ্য থেকে ইসলাম/দ্বীন সম্পর্কে ফিতনা প্রকাশ পাবে। অতপর সেই ফিতনা তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।” (বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান অধ্যায়)
রাবী পরিচিতি :
আলী ইবনে আবি তালিব রাসূল (সা.) এর চাচাত ভাই এবং জামাতা। নবী (সা.) এর পরিবারে লালিত-পালিত।
ইসলাম গ্রহণ : সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম।
মর্যাদা : আশআরে মুবাশ্শারাদের (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০জন সাহাবীর) অন্তর্ভূক্ত। রাসূল (সা.) বলেছেন,
عن عبد الرحمن بن عوف قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم أبو بكر في الجنة و عمر في الجنة و عثمان في الجنة و علي في الجنة و طلحة في الجنة و الزبير في الجنة و عبد الرحمن بن عوف في الجنة و سعد في الجنة و سعيد في الجنة و أبو عبيدة بن الجراح في الجنة –
“হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আবু বকর জান্নাতী, উমর জান্নাতী, উসমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, তালহা জান্নাতী, যুবায়ের জান্নাতী, আব্দুর রহমান বিন আওফ জান্নাতী, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতী, সাঈদ ইবনে যায়িদ জান্নাতী, আবু আব্দুল্লাহ ইবনে র্জারাহ জান্নাতী।” (সূনানে আত-তিরমিযি)
তিনি তাবুক অভিযান ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাবুক অভিযানের সময় রাসূল (সা.) তাকে মদীনার দায়িত্বে নিয়োজিত রখেছিলেন।
তিনি ছিলেন জ্ঞানের মহা সাগর। রাসূল (সা.) বলেছেন,
أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا
“আমি জ্ঞানের নগরী আর সে নগরীতে প্রবেশের দরজা হচ্ছে আলী।” (মুসতাদরিক)
আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যা :
এ হাদীসের মধ্যে রাসূল (সা.) মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চারটি ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। আর তা হলো:
১. لَا يَبْقَى مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ : ইসলামের নামটা ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না।
রাসূল (সা.) এই পৃথিবীতে এসেছিলেন সকল মতবাদের উপরে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
“তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আস-সফ, আয়াত ৯)
ইসলামকে বিজয়ী আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ অবর্ণনীয় কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (সা.) এর মাধ্যমে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।” (সূরা মায়েদা, আয়াত ৩)
মানবতার কল্যাণে যে ইসলাম বা জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে এসেছে সেই ইসলামের বাস্তব প্রতিফলন সমাজে থাকবে না। শুধু নামে থাকবে ইসলাম।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে দলে দলে বিভক্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্কবাণী উল্লেখ পূর্বক খুবই সুক্ষèভাবে ঘোষণা করেছেন-
فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
“তারপর লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে উৎফুল্ল।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত ৫৩)
مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُون
“যারা নিজদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।” (সূরা আর-রূম, আয়াত ৩২)
২. وَلَا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا رَسْمُهُ : আল-কুরআনের আক্ষরিক তিলাওয়াত ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
আল-কুরআন বিশ্ব মানবতার হেদায়েতের একমাত্র গ্রন্থ। পৃথিবীর যে কেউ হেদায়াত পেতে চাইলে তাকে আল-কুরআনের ছায়াতলে আসতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا
“নিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মু’মিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৯)
আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে আরো বলেন,
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
“অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন।” (সূরা মায়েদা ১৫-১৬)
এই কুরাআনকে সম্পূর্ণভাবে মেনে চললে সকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ
“আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।” (সূরা আন-নাহল ৮৯)
বর্তমান সময়ের মুসলামানগণ এই আল-কুরআরকে তিলাওয়াত সর্বস্ব কিতাবে পরিণত করেছে। এ কথার দ্বারা এটা মনে করার সুযোগ নেই যে, কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। বরং আল-কুরআন তিলাওয়াত করলে আপনি অবশ্যই প্রতি হরফে ১০টি করে নেকি পাবেন। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآَنَ فَلَهُ بِكُلِّ حَرْفٍ عَشْرَ حَسَنَاتٍ
“যে ব্যক্তি আল-কুরআন তিলাওয়াত করবে প্রতিটি হরফের তার জন্য রয়েছে ১০টি করে সওয়াব।” (আল-বুরহান ফি উলুমিল কুরআন)
আল-কুরআনের হক হচ্ছে তাকে তিলাওয়াত করতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে, বাস্তব জীবনে কুরআনের বিধান মেনে চলতে হবে। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,-
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
“যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” সূরা আল-বাকারা ২
কারণ এই আল-কুরআন কিয়ামতের দিন আপনার আমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন-
الْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ
“আল-কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।” (আহকামুশ-শরীয়াহ)
৩. مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرَابٌ مِنَ الْهُدَى : মসজিদগুলো হবে বাহ্যিক দিক দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সুরম্য ইমারত কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হবে হেদায়াতশূণ্য।
রাসূল (সা.) এর জামানায় মসজিদ ছিলো সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু। সাড়ে নয় লক্ষ বর্গমাইলের প্রেসিডেন্ট রাসূল (সা.) তাঁর কোন রাজ সিংহাসন ছিলো না। মসজিদের মিম্বরে দাড়িয়ে অথবা বসে ইসলামী রাষ্ট্রের সকল কার্যাবলী সম্পাদন করতেন। তখন রাষ্ট্রীয় সচিবালয় ছিলো মসজিদ।
এখানে মানুষ নামাজ আদায় করত, খুৎবা/ভাষণ শুনত, তালিম-তারবিয়াত হত, লেখা-পড়া হত, বিচার-ফয়সালা করা হত। কিন্তু আমাদের সমাজে নামাজ আদায় করা ছাড়া আর কোন কাজ করা হয় না।
বর্তমান সময়ের এক শ্রেণীর আলেমগণ বলেন, মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলা, কর্ম-কা- করা হারাম। এই ফতোয়া দেওয়ার মাধ্যমে মসজিদ থেকে সমাজের মানুষদেরকে আলাদা করে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে তাদেরকে বিমুখ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মসজীদে করণীয় ও বর্জনীয় কাজের বিবরণ আল-কুরআন, আল-হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্রে বিস্তারিত উল্লেখিত আছে। যেমন-
১. নামায আদায় করা, ইসলামী শরীয়াতের বিধি-বিধানের শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ দেওয়া।
২. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা,
৩. বিচার-ফয়সালা করা, কিন্তু শাস্তি কার্যকর হবে মসজিদের বাইরে।
৪. ইমামের নেতৃত্বে মহল্লাবাসীর দ্বীনের দা‘ওয়াত দেওয়া ও সার্বিক বিষয়ে খোজ-খবর নেওয়া।
৫. ইসলাম বিরোধী আচার-আচরণ সমাজ থেকে উৎখাত করার জন্য প্রয়োজনীয় কলা-কৌশল নির্ধারণ।
৬. যাকাত, দান-সদকা সংগ্রহ-বন্টন ইত্যাদি।
৭. ইতেকাফ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া-যিকির ইত্যাদি।
৮. মানুষের জন্য কল্যাণ মূলক শিক্ষা দান।
৯. ইসলামী অনুশাসন যে রষ্ট্র বা সমাজে কায়েম আছে সেখানে মজলিসে শূরার বৈঠক করা।
১০. ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষঢ়যন্ত্রের মোকাবেলায় আদেশ-নির্দেশ ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা।
৪. عُلَمَاؤُهُمْ شَرُّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ مَنْ عِنْدَهُمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيهِمْ تَعُودُ : আর তাদের আলেমরা হবে আকাশের নিচে জমিনের উপরে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ তাদের মধ্য থেকে ইসলাম/দ্বীন সম্পর্কে ফিতনা প্রকাশ পাবে। অতপর সেই ফিতনা তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।
এক শ্রেণীর আলেম শুধু দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীন শিক্ষা করবে, তারা সমাজে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করবে। এ বক্তব্যে সাধারণ মানুষ সঠিক ইসলাম থেকে সরে যাবে এবং বিভ্রান্তিতে পতিত হবে।
মুসলিম জাতির আদর্শিক পিতা হযরত ইবরাহীমের (আ.) আদর্শ অনুসরণ করত: রাসূল (সা.) একটি সুসংগঠিত জাতি তৈরী করেছিলেন। আমরা আজ সে আদর্শে উদাসীন হয়ে নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। এ যেন আল-হাদীসের বাস্তব উদাহরণ: রাসূল (সা.) বলেছেন-
إِنَّ بَنِى إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِى عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِى النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِىَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِى
“বনি ইসরাঈলরা ৭২ টা দলে বিভক্ত হয়েছিলো আর আমার উম্মরা ৭৩ টা দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে ১টি দল ছাড়া সব দল জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন সে দল কোনটি? রাসূল (সা.) বললেন, আমি আমার সাহাবীদের নিয়ে যে কাজ করেছি এ কাজগুলো যারা করবে তারাই হবে জান্নাতি। (সূনানে আত-তিরমিযি)
এ সকল দলগুলো তৈরী হয়েছে খোলাফায়ে রাশেদীনের পর থেকে অদ্যবধি সমাজের এক শ্রেণীর আলেমগণের মাধ্যেমে।
রাসূল (সা.) প্রায় সাড়ে নয় লক্ষ বর্গমাইল এলাকার রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে একটা অবিভাজ্য দলের (আল-জামায়াত) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) এর পর তাঁর উত্তরসূরী হযরত উমর (রা.) বার লক্ষ বর্গমাইলের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অনুরূপ একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অথচ বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এটাই মুসলিম বিশ্বের পতনের বহুবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ।
একজন মুসলমান আর একজন মুসলমানকে বরদাস্ত করতে পারে না। বাংলাদেশেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশী অনৈক্য, দলাদলি ও বিভেদ রয়েছে মুসলমানদের মধ্যে।
এমতাবস্থায় আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আল-কুরআন, আল-হাদীস, রাসূল (সা.) এর সীরাত, ও সাহাবায়েকেরামগণের জীবনালেখ্য অধ্যয়ন করে সরাসরি আমল করতে হবে।
এছাড়া আমাদের দেশের আলেমগণের পারস্পারিক বিরোধিতাপূর্ণ ফতোয়া দান বন্ধ করে, তাদের মধ্যকার ছোট-খাটো বিভেদ নিরসন করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে হবে।
-মাওলানা মোঃ হাবিবুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ